সম্পাদকীয় ১...
সম্মার্জনী
নির্দিষ্ট কিছু গর্হিত অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইলে কেহ নির্বাচনে প্রার্থী হইতে পারেন না। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একই অপরাধে দণ্ডিত হইলেও উচ্চতর আদালতে আপিল করিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আইনসভায় আপন আসনটি বজায় রাখিতে পারেন। স্পষ্টতই, এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে অসংগতি আছে। এত দিন ভারতে সেই অসংগতি চলিতেছিল। সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে তাহা দূর করিবার উপযোগী বিধান দিয়াছেন। এখন হইতে কোনও সাংসদ বা বিধায়ক কোনও বড় অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইলেই তৎক্ষণাৎ তাঁহার সদস্যপদ চলিয়া যাইবে। সংগতি অতি প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান ধর্ম। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সেই ধর্ম মর্যাদা পাইল।
কিন্তু তাহা এই রায়ের একটি গৌণ দিক। ইহার মুখ্য তাৎপর্য অন্যত্র। তাহা ন্যায়ের প্রশ্নে। এতদ্দ্বারা সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় আইনসভা তথা নির্বাচন তথা রাজনীতির পরিসরটিকে কলুষমুক্ত করিবার পথে একটি বড় পদক্ষেপ করিলেন। ভারতে ‘রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন’ শব্দবন্ধটি এখন বহুব্যবহারে জীর্ণ। কী কেন্দ্র, কী রাজ্য, কী স্থানীয়, বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিসভায় বহু সদস্য নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত, অনেকেই দণ্ডিত। দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করিয়া বহু কাল অতিবাহিত করা যায়, কারণ এ দেশের বিচারপ্রক্রিয়া স্বভাবত সময়সাপেক্ষ। মারাত্মক সমস্ত অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষগণ (এই তালিকায় নারীরা এখনও নিতান্ত ব্যতিক্রমী) রাজনীতির ময়দানে দাপাইয়া বেড়াইতেছেন এবং অনেকেই ভোটে দাঁড়াইয়া ও জয়ী হইয়া পবিত্র আইনসভায় অধিষ্ঠিত হইতেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত সুলভ। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ সমস্ত দলকেই এ বিষয়ে কিছুটা সতর্ক করিবে। বিশেষত, এক জন সাংসদ বা বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ হইয়া গেলে যদি সেই আসনের জন্য নূতন নির্বাচনে যাইতে হয়, তবে বহু ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দলের জয়লাভের সম্ভাবনা কমিবে, কারণ সেই দল তখন ‘অপরাধী’র পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিশেষ করিয়া চিহ্নিত হইয়া গিয়াছে। নির্বাচনী রাজনীতিকে অপরাধের কালগ্রাস হইতে মুক্ত করিবার পথে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ একটি বড় পদক্ষেপ।
একটি প্রশ্ন নিশ্চয়ই থাকিয়া যায়। একাধারে সংগতি এবং ন্যায়ের প্রশ্ন। ধরা যাক, একটি আদালতে দণ্ডিত হইবার ফলে কাহারও সদস্যপদ চলিয়া গেল, কিন্তু পরে উচ্চতর আদালতের রায়ে সাব্যস্ত হইল যে তিনি নিরপরাধ। এমন ঘটনা ঘটিয়াই থাকে, একটি আদালতের রায়ের সহিত অন্য আদালতের রায়ের সংগতি অবধারিত নয়। কিন্তু তেমন ক্ষেত্রে অভিযুক্তের সদস্যপদ খারিজ হওয়া ন্যায্য প্রতিপন্ন হইবে না কি? প্রশ্নটি বিশেষ গুরুতর হইয়া ওঠে এই কারণে যে, অনেক সময়েই রাজনীতিকদের ‘মিথ্যা মামলা’য় বিপন্ন করা হইয়া থাকে। মামলা মিথ্যা হইলে প্রথম পর্বেই আদালতে তাহার সুবিচার সম্পন্ন হইবে, অভিযুক্তের দণ্ডিত হইবার কোনও সম্ভাবনা থাকিবে না আদর্শ অবস্থায় ইহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু আদর্শ এবং বাস্তবের মধ্যে অনেক সময়েই বড় দূরত্ব থাকে। সুতরাং নানা কারণেই বিনা অপরাধে আইনসভার সদস্যের ‘শাস্তি’ পাইবার সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না।
ইহার উত্তরে দুইটি কথা বলা যায়। এক, বিচার প্রক্রিয়ার একটি পর্যায়ে যে দণ্ড বিহিত হয়, পরবর্তী পর্যায়ে তাহা খণ্ডিত হইলে সাধারণ ভাবেই প্রশ্ন ওঠে: তাহা হইলে পূর্ববর্তী দণ্ড কি অবিচার ছিল না? নিম্ন আদালতে অপরাধী সাব্যস্ত হইবার ফলে অভিযুক্তকে বিবিধ সামাজিক ও আর্থিক সংকটে পড়িতে হয়, পরে মামলার ফল উল্টাইয়া গেলেও সেই সংকটের সম্পূর্ণ প্রতিকার হয় না। অর্থাৎ, সংগতি এবং ন্যায়ের সমস্যাটি কেবল জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিকের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নয়, সাধারণ ভাবেই সত্য। দুই, শেষ বিচারে হয়তো নূতন ব্যবস্থায় কিছু ‘নিরপরাধ’ জনপ্রতিনিধিত্বের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সম্মার্জনীর গুণে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন যদি সত্যই কমে, এইটুকু মূল্য হয়তো তাহার জন্য মানিয়া লইতেই হইবে। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া এক দিন আসিবে, যখন আর সম্মার্জনীর প্রয়োজন হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.