|
|
|
|
রাজবাড়ি সংস্কার নিয়ে আপত্তি মণিপুর-রাজের |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
মেরামতির অজুহাতে রাজবাড়ি ‘দখল’ করতে পারে রাজ্য সরকার এমনই আশঙ্কায় রয়েছেন মণিপুরের রাজা! সে কারণে জীর্ণ ওই ভবন সংস্কারের প্রশাসনিক উদ্যোগে তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজার বাড়িই শুধু নয়, রাজবাড়ির চত্বরও সংস্কারের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা। প্রথমে সম্মত হয়েছিলেন রাজাও। কিন্তু পরে আপত্তি তোলেন। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, মেরামতির পর রাজবাড়িতে সংগ্রহশালা গড়ে দিতে পারে সরকার--সেই আশঙ্কাতেই মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত আর মানতে চাইছেন না তিনি।
লাংথাবাল এলাকায় ওই রাজবাড়ি ‘সানা কোনুং’ প্রাসাদ হিসাবেই পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহারাজা গম্ভীর সিংহের আমলে সেটি তৈরি হয়েছিল। ১৮৯১ সালে ছ’জন ব্রিটিশ সৈন্যের মুণ্ড কেটে নেয় বিদ্রোহীরা। তার জেরে ইংরেজদের সঙ্গে মণিপুরের শাসকদের লড়াই শুরু হয়। তখন কংলা দূর্গ দখল করে নেয় ইংরেজরা। যুদ্ধের পর দু’পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র তৈরি করা হয়। ইংরেজদের মনোনীত রাজার জন্য তখন বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে বর্তমান প্রাসাদটি গড়ে ওঠে। |
 |
মণিপুর রাজবাড়ি।—নিজস্ব চিত্র। |
সরকারি মুখপাত্র তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এম ওকেন্দ্র জানান, ২০০৬ সালে রাজবাড়ি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। রাজার বর্তমান বাসভবনের সংলগ্ন ৭.১৭৯ একর জমি সংরক্ষণের জন্য অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এতে সম্মত ছিল দু’পক্ষই। বিতর্কের সূত্রপাত মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক পরিকল্পনার জেরেই।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ঐতিহাসিক ওই রাজবাড়ির লাগায়ো কাঠামোগুলিকেও মেরামত করা প্রয়োজন। সে কারণে অধিগ্রহণ করতে হবে ১২-১৩ একর জমি। পরবর্তীকালে রাজবাড়িকে পর্যটনকেন্দ্রের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওকেন্দ্র জানান, রাজবাড়ির দরবার হল, রাসমণ্ডল, রাজকীয় গম্বুজ ও অন্যান্য কাঠামোগুলি বিজ্ঞানসম্মতভাবে পুরনো দিনের নকশা অটুট রেখেই মেরামত করা হবে।
মণিপুরের রাজা লেইসেম্বা সানাজাওব বর্তমানে থাকেন ওই ভবনেই। তা-ই সাধারণ পর্যটকরা সেখানে যেতে পারেন না। মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলাকালীন নিজের পছন্দমতো মহলেই রাজার থাকার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। রাজপরিবারের রীতিনীতির উপরে কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না। স্বাধীন মণিপুরের ঐতিহ্য পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে নতুনভাবে সাজানো প্রাসাদ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে মন্ত্রিসভা।
সরকারের ওই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই, রাজবাড়ি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে পথে নেমেছে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন। রাজবাড়ি ও রাজপ্রাসাদ চত্বর অধিগ্রহণের সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদে প্রাসাদের সামনে ধর্না দেন ‘সানা কোনুং সেমগাত লুপ’ সদস্যরা। তাঁদের দাবি, ৩২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রাজস্বে থাকা ওই রাজপরিবারকে মণিপুরবাসী জীবন্ত দেব পরিবার হিসাবে মেনে চলেন। নাগরিকরা বিশ্বাস করেন, রাজপরিবারের সকলে সর্প দেবতা পাখানবার বংশধর। ‘দেবতার বাড়ি’ অধিগ্রহণের ক্ষমতা গণতন্ত্রের নেই।
ওই সংগঠনের দাবি, ১৯৪৯ সালের সংযুক্তিকরণ চুক্তি অনুযায়ী রাজপ্রাসাদ নিয়ে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না রাজ্য সরকার। সেটি একেবারেই সরকারের এক্তিয়ারের বাইরে। রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাত দেখিয়ে রাজপ্রাসাদ দখল করতে চাইছে সরকার। এ প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ’ নামে বাংলাদেশ থেকে আসা মণিপুরের প্রবাসী বাসিন্দাদের একটি প্রতিনিধিদলও প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, রাজবাড়ির ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চরিত্রের জন্যই মেইতেইদের কাছে সেটি পীঠস্থান।
লুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরে, নিংথৌজা বংশের বর্তমান রাজা সানাজাওবও প্রাসাদ অধিগ্রহণে আপত্তি করেছেন। |
|
|
 |
|
|