আবাসনের ভিতরে ‘বেআইনি’ নির্মাণের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রোমোটারদের কাছ থেকে রীতিমতো খুনের হুমকি শুনতে হল এক বাসিন্দাকে। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে বাগুইআটির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যাংরা অঞ্চলের একটি আবাসনে।
নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র আবাসন তৈরির অভিযোগ সিপিএম পরিচালিত রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় নতুন নয়। অভিযোগ, কোথাও সরু রাস্তার পাশে দমকল ঢুকতে পারবে না, এমন জায়গায় হয়েছে বহুতল। কোথাও আবাসিকদের দেওয়া বহু প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেননি প্রোমোটার। তবে এ বার ‘বেআইনি’ নির্মাণের প্রতিবাদে খুনের হুমকি শুনে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন জ্যাংরার ওই আবাসনের বাসিন্দারা।
বাগুইআটির জর্দাবাগানের কাছে ওই আবাসনের বাসিন্দাদের তরফে রজতকুমার দে-র অভিযোগ, ফ্ল্যাট কেনার আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো প্রায় কিছুই মেলেনি। উল্টে আবাসনের ভিতরে ‘অবৈধ নির্মাণের’ জন্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবাসিকদের অভিযোগ, যেখানে সুইমিং পুল হওয়ার কথা, সেখানে হয়েছে গ্যারাজ। আবাসনের মধ্যেই তৈরি হয়েছে অস্থায়ী শৌচালয়। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না করেই শুরু হয়েছে ছ’তলা নির্মাণ। এক আবাসিকের অভিযোগ, “শৌচালয়ের দুর্গন্ধে আমরা ফ্ল্যাটের দুটো ঘরের জানলা পর্যন্ত খুলতে পারি না।”
রজতবাবু বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি প্রোমোটারকে জানালে তিনি চুপ করে থাকতে বলেন। পরে আমাদের ফোনে খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।” তিনি জানান, খুনের হুমকির বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ‘অবৈধ’ নির্মাণের বিষয়টি জানিয়েছেন পুর-চেয়ারম্যান, বিধায়ক-সহ একাধিক ব্যক্তিকেও। কিন্তু ফল হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও আবাসনের প্রোমোটার স্বাগতম সাহা খুনের হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নির্মাণকাজের অনুমতি পুরসভার কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে নেওয়া হয়েছে। আবাসিকদের যে সব সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি সবই দেওয়া হবে।”
খুনের হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে অভিযুক্তকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
আবাসনের বাসিন্দারা জানান, শেষ পর্যন্ত বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে তাঁরা আদালতে যান। আদালত সংশ্লিষ্ট পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের ওই নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে সাত দিনের মধ্যে আবাসিকদের রিপোর্ট দিতে বলে। অভিযোগ, ইঞ্জিনিয়ারেরা নির্মাণকাজ পরিদর্শন করলেও সেই রিপোর্ট এখনও দেননি। নির্মাণকাজও বন্ধ হয়নি।
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চলতি মাসেই পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের মিটিংয়ে এই প্রসঙ্গটি উঠবে। সেখানেই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে কী পেয়েছেন, আবাসিক ও প্রোমোটার দু’পক্ষকেই তা জানিয়ে দেবেন।”
অভিযোগ, বাম আমল থেকেই রাজারহাট-গোপালপুর পুর-এলাকায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। এই পুরসভা এখনও সিপিএমের দখলে। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসুর অভিযোগ, “রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের মদতেই বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। আইনি লড়াই হচ্ছে আবাসিকদের বাঁচার উপায়।” যদিও তাপসবাবু বলেন, “কোথাও কোনও অভিযোগ পেলেই আমাদের ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিন দেখেন। পূর্ণেন্দুবাবুর কাছে এই এলাকায় অবৈধ নির্মাণের কোনও তালিকা থাকলে আমাদের হাতে সেই তালিকা তুলে দিন। আমরা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব।” |