আষাঢ়ের আকাশে শরতের মেঘ! শুধু তা-ই নয়, মেঘ-বৃষ্টির বদলে মেজাজ চড়েছে রোদেরও।
বাংলা ঋতুচক্রের হিসেবে, আষাঢ়-শ্রাবণ ভরা বর্ষার মাস। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের মেলা, জল থইথই দুপুর। কিন্তু গত দিন দশেক ধরে সেই মেজাজটাই হারিয়ে গিয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গ থেকে। আবহবিদেরা বলছেন, জুন মাসের শেষ লগ্ন থেকে বর্ষা কিছুটা মুখ দুর্বল হয়ে পড়াতেই আষাঢ়ের আবহাওয়ার এই পরিবর্তন।
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, বর্ষার তীব্রতা বাড়া-কমার পিছনে দায়ী থাকে নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্ত বা মৌসুমী অক্ষরেখা। এদের ফলেই সক্রিয়তা বাড়ে মৌসুমী বায়ুর। দাপট বাড়ে বর্ষার। কলকাতায় বর্ষার তীব্রতার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত বড় প্রভাব ফেলে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, জুন মাসের শেষ লগ্ন থেকে বঙ্গোপসাগরে সে ভাবে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়নি। জুলাইয়ের প্রথম দিকে একটি নিম্নচাপ তৈরি হলেও তা অন্ধ্র-ওড়িশার দিকে সরে যায়। ফলে বাংলার বৃষ্টি-ভাগ্যে তার প্রভাব সে ভাবে পড়েনি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে গ্রীষ্মের শেষ ভাগ থেকে ভালই বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। কিন্তু জুন মাসের শেষ ভাগ থেকে বর্ষা-ভাগ্য বদলে যাওয়ায় বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও আবহবিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে, আষাঢ়ে মাঝেমধ্যেই ভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই সেটাই অমিল। বদলে বেলা বাড়তেই চড়চড়িয়ে বাড়ছে রোদের তেজ। নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পুঞ্জ পুঞ্জ সাদা মেঘ। কখনও কখনও উড়ো মেঘে নামছে দু’-এক পশলা বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, মৌসুমী অক্ষরেখা দিঘার উপর দিয়ে যাওয়ার ফলে এমন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনটাই যেন আগে-ভাগে হাজির করে দিয়েছে পুজোর মেজাজটাকে। গত কয়েক বছর ধরে বারোয়ারি পুজোর সৌজন্যে অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পুজো এসে হাজির হচ্ছে মহানগরে। এবং তা বাঙালির বর্ষাকালেই। ইদানীং রথের দিনেই মহানগরের বারোয়ারি পুজোয় খুঁটিপুজোর চল হয়েছে। এবং সেখান থেকেই পুজোর বাদ্যি বাজাতে শুরু করেছে ক্লাবগুলো। “আগে পুজো শুরু হত ষষ্ঠীর দিন, বোধনে।
এখন খুঁটিপুজোর যা রমরমা, তাতে একে প্রাক-বোধন বললে অত্যুক্তি হবে না।” মন্তব্য উত্তর কলকাতার এক পুজোকর্তার।
এ বছরের বর্ষায় শরতের আবহাওয়া সেই প্রাক-বোধনকেই যেন আরও কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছে। উত্তর কলকাতার একটি ক্লাবের কর্তা বলছেন, “অন্য বার বৃষ্টি-বাদলের মধ্যেই খুঁটিপুজো করি। এ বারে শরৎ নীল আকাশ তো উপরি পাওনা।” একই কথা দক্ষিণের এক পুজো কমিটির কর্তা সোমনাথ দাসেরও। তিনি বলছেন, “ভরা বর্ষায় এমন পুজোর আবহাওয়া খুঁটিপুজোর মজাটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।” পুজোকর্তাদের এই বক্তব্যের প্রমাণ মিলবে ফেসবুক ঘাঁটলেই।
সেখানে পুজো কমিটিগুলি নিজেদের খুঁটিপুজোর ছবি আপলোড করছে, নাগাড়ে কমেন্ট করছেন ক্লাব সদস্যরা।
পুজোর আবহাওয়া যেমন এসেছে, তেমনই আষাঢ় শেষ হতে না হতে পুজোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কোথাও চলছে মণ্ডপ তৈরির জমি মাপার কাজ, কোথাও বা থিম প্রচারে নেমে পড়েছেন ক্লাবকর্তারা। হাতিবাগানের একটি ক্লাব যেমন অরবিন্দ সরণির উপরে ব্যানার টানিয়ে নিজেদের শিল্পীর প্রচার করছে, আবার বেহালার একটি ক্লাব আবার বেছে নিয়েছে ফেসবুককে।
বর্ষায় শরতের মেজাজ পুজোকে বাড়তি অক্সিজেন জোগালেও অনেকে আবার প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার আশঙ্কাও করছেন। তাঁদের মতে, এখন বৃষ্টি হলে পুজোর কাজ সে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। হাতিবাগানের একটি পুজো কমিটির কর্তা সোমেন দত্ত বলছেন, “এ বার যদি শরতে বর্ষার মেজাজ ফিরে আসে, তা হলে পুজোর শেষ লগ্নের কাজ বিগড়ে যেতে পারে।” |