তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জের
স্ত্রী প্রার্থী হলেও স্বামী নির্দলেই
শাসক দলের জোড়া ঘাসফুল প্রতীকে স্ত্রী লড়ছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে। আর সেই প্রতীকেরই বিরুদ্ধে গাঁদা ফুল চিহ্নে পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তাঁরই স্বামী! এমনই চিত্র ধরা পড়েছে বরাবর বামেদের দখলে থাকা বোলপুর ব্লকের সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতে।


যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী পাপিয়া মুখোপাধ্যায়ের স্বামী প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলেরই সুভাষ পালের বিরুদ্ধে। মুলুক গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্তবাবু এলাকায় পুরনো তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত হলেও দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। আর তাতেই ক্ষুব্ধ প্রশান্তবাবু সটান দাঁড়িয়ে পড়েছেন নির্দল হয়ে। অবশ্য নির্দল নন, ‘প্রকৃত তৃণমূল’ প্রার্থী বলেই নিজেকে দাবি করছেন তিনি। এ দিকে নিজে ‘বঞ্চিত’ হলেও স্ত্রী আবার সহজেই বাগিয়েছেন তৃণমূলের টিকিট। ফলে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে বাড়ির হেঁশেলেও ঢুকেছে ‘দ্বন্দ্ব’! আর ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক ভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে এলাকাতেও জল্পনা তুঙ্গে। মনোনয়নপর্ব শেষে ওই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের ৫টিতে এবং পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনের দু’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় আগেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। আগামী ২২ জুলাই চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটে এখানে বাকি ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত, একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও একটি জেলা পরিষদের আসনে ভোট হবে।
একই দেওয়ালে প্রচার। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী।
ওই আসনগুলি নিয়েই বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি যুযুধান রাজ্যের শাসক দলেরই দুই গোষ্ঠী। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে পরস্পরের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন দলেরই দুই দীর্ঘ দিনের কর্মী সুভাষ পাল ও প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়। প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি শাসক দলের প্রবীণ নেতা সুভাষবাবুর তোপ, “দলের হয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, মা-মাটি-মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দল তাঁকেই প্রতীক দিয়েছে। অনেকেই এখন আম, জাম, কাঁঠাল, গাঁদা ফুল হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা আর যাই হোক, তৃণমূল নন।” তাঁর অভিযোগ, “স্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী। নিজে নির্দল। আবার জেলা পরিষদে প্রচারে নেমেছেন এসইউসি-র হয়ে!” তাঁর দাবি, মানুষ বুঝছেন কে আসল আর কে নকল।
বাড়ির বড় বৌ তৃণমূলের প্রার্থী। ছেলে আবার সেই দলের বিরুদ্ধেই প্রার্থী হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন প্রশান্তবাবুর মা মেনকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ছেলে কে দেখেই বৌমার রাজনীতিতে আসা। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল। বৌমা পেল দলের প্রতীক, আর ছেলে হল নির্দল!” আর তার ফল কী হয়েছে? এক দিকে, বাড়ির বড় বৌ বাইরে গিয়ে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছেন। অন্য দিকে, তাঁরই স্বামী নিজের প্রচারে তৃণমূল প্রার্থীর বিরোধিতায় নেমেছেন! আর তা নিয়েই পাড়া-প্রতিবেশী ঠাট্টা তামাশা জুড়েছেন বলে মেনকাদেবী জানাচ্ছেন। তবে তাঁর সহাস্য মন্তব্য, “যত মন কষাকষি বাড়ির বাইরে। প্রচার সেরে ঘরে ফিরলে স্বামী-স্ত্রী কিন্তু আগের মতোই খুনসুটি জুড়ে দেয়!”
এ দিকে প্রতিদ্বন্দ্বীর মতোই জোর প্রচারে নেমেছেন ‘তৃণমূলে’র নির্দল প্রার্থী প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রতি সুভাষবাবুর তির্যক মন্তব্য শুনে প্রশান্তবাবু বললেন, “সুভাষবাবু দলের বর্ষীয়ান নেতা। কিন্তু তা বলে মানুষের আপদে বিপদে দাঁড়িয়ে থেকে সমস্যা সমাধান করা মুখের কথা নয়।” তাঁর পাল্টা দাবি, “আমি ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করছি। দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। এলাকায় তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। গত পঞ্চায়েত ভোটেই গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে মাত্র একটি ভোটে পরাজিত হয়েছি।” ‘প্রকৃত তৃণমূল’কর্মী হিসেবে মাটিতে নেমে কাজ করেছেন বলে দলীয় প্রতীক না পেয়েও এলাকায় ভাল সাড়া পাচ্ছেন বলে প্রশান্তবাবু দাবি করেছেন।
স্ত্রী পেলেন, স্বামী টিকিট পেলেন কেন? তৃণমূলের বোলপুর ব্লক সভাপতি চিত্তরঞ্জন রক্ষিতের যুক্তি, “জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই পাপিয়াদেবীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ওই আসনটির ক্ষেত্রে দল সুভাষবাবুরই নাম চূড়ান্ত হয়েছিল। তাই প্রশান্তবাবকে টিকিট দেওয়া যায়নি।” পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে পরিবারে এমন বিচিত্র সমীকরণ তৈরি হওয়ার প্রসঙ্গে অবশ্য বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি সতর্ক পাপিয়াদেবী। শুধু বলেন, “দলের প্রতীক পেয়েছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। স্বাভাবিক কারণেই বলব, তৃণমূলকে জয়ী করুন।” আর স্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে স্বামীর মন্তব্য, “স্ত্রী নিজের মতো প্রচার করছে, আমি আমার মতো। তাতে তো কোনও সমস্যা নেই! তবে দল আমাদের দু’জনকেই একসঙ্গে টিকিট দিতে পারত।” আর তা যখন হয়নি, তখন স্ত্রীর দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ভোট-যুদ্ধে নামতে হয়েছে স্বামীকে!
এলাকার বাজারহাট থেকে পুকুরঘাট স্বামী-স্ত্রীর এই বিচিত্র ‘লড়াই’ নিয়েই এখন জোর চর্চা। এই লড়াইয়ে কোন তৃণমূল জিতবে? জোড়া ঘাসফুল তৃণমূল নাকি গাঁদা ফুল ‘তৃণমূল’? পাপিয়াদেবীর উত্তর, “মানুষের সঙ্গে, মানুষের পাশে থাকা তৃণমূল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.