|
|
|
|
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সেক্টর অফিসে রেখেই ভোট আজ |
রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান |
প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, জেলায় মোট বুথের মধ্যে ৬৪ শতাংশই অতি স্পর্শকাতর বা স্পর্শকাতর। অথচ বর্ধমানে আজ, সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে অধিকাংশ বুথেই থাকছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ। অতি স্পর্শকাতর বুথে তাঁদের সঙ্গে মোতায়েন করা হবে দু’জন লাঠিধারীকে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বুথ লাগোয়া এলাকা, পুলিশের ভাষায় যা ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’।
বর্ধমান জেলায় প্রায় ৪৮০০টি বুথ। তার মধ্যে ১৭৪৩টি অতি স্পর্শকাতর, ১৩১৯টি স্পর্শকাতর, ১৩৬৬টি তুলনায় কম স্পর্শকাতর ও ৩৬৬টি স্বাভাবিক। সোমবার ভোটের জন্য জেলায় এসেছে মোট ৫৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় ৪৩ ও আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট এলাকায় ১৫ কোম্পানি বাহিনী থাকবে। জেলা প্রশাসনের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ীই, প্রতিটি বুথে ভোটের দিন দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ, অতিস্পর্শকাতর বুথে তাঁদের সঙ্গে দুই লাঠিধারী পুলিশ থাকবেন। জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ ছাড়া বুথ চত্বরে কোনও প্রহরা রাখার কথা বলা হয়নি।” |
|
ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে একটু বিশ্রাম। পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুরে। —নিজস্ব চিত্র। |
জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, গত ৮ জুলাই জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক ওঙ্কার সিংহ মিনা, জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যবেক্ষক কমলকুমার চক্রবর্তী ও পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার মধ্যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথ লাগোয়া (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) এলাকায় মোতায়েন করা হবে। শিল্পাঞ্চল এলাকার জন্য একই সিদ্ধান্ত হয় জেলাশাসক, এই ভোটের জেলা পর্যবেক্ষক ও আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের মধ্যে আলাদা একটি বৈঠকে। জেলা পর্যবেক্ষক কমলকুমারবাবু ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য সরে যাওয়ায় শনিবার সেই পদে এসেছেন আনন্দমোহন চক্রবর্তী, যিনি আগে খণ্ডঘোষের পর্যবেক্ষক ছিলেন।
জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, অতি স্পর্শকারত বুথগুলিতে চার জন করে প্রহরী মোতায়েন করার কথা। কিন্তু তাঁদের দু’জন সশস্ত্র ও দু’জন লাঠিধারী হবেন বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও জওয়ান লাঠি নিয়ে ভোটের ডিউটিতে যেতে রাজি নন। তাই এই বাহিনীর বড় অংশকেই স্পর্শকাতর বুথে মোতায়েন করা সম্ভব হবে না। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শুধু বুথে মোতায়েন করে লাভ নেই। কারণ, বিভিন্ন বুথে ভোট দিতে যাওয়া মানুষজনকে বাধা দেওয়া হতে পারে বলে নানা এলাকা থেকে আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। বুথে যাওয়ার রাস্তার পাশে তাস বা ক্যারাম খেলার ছলে বসে থাকা লোকজন এই দুষ্কর্ম করতে পারে বলে আশঙ্কা নানা মহলের। তা যাতে না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সজাগ রাখা হবে। কোনও অভিযোগ মিললেই সেক্টর অফিসে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সংশ্লিষ্ট বুথের দিকে মার্চ করানো হবে। তা ছাড়া এমনিও ওই বাহিনীর লোকেরা সোমবার নানা সময়ে গ্রাম বা বুথ লাগোয়া এলাকায় টহল দেবে। তাতে ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে আসতে পারবেন, ভয় দূর হবে।”
|
অমল হালদার
সম্পাদক, জেলা সিপিএম ভোটের আগে আগাম কোনও ভবিষ্যৎবাণী করতে পারব না।
আশা করি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
|
স্বপন দেবনাথ
সভাপতি, জেলা তৃণমূল
কয়েক জায়গায় ওরা গোলমাল পাকাবে। কর্মী-সমর্থকদের বলেছি,
ফাঁদে পা দেবেন না। জেতা ছাড়া আর কিছু ভাবছি না।
|
আজিজুল হক মণ্ডল
সভাপতি, জেলা কংগ্রেস (গ্রামীণ)
মনোনয়ন জমার দিন থেকে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী
ঠিকমতো ব্যবহার হলে, অবাধ নির্বাচন হবে।
|
দেবীপ্রসাদ মল্লিক
সভাপতি, জেলা বিজেপি
তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমরা প্রার্থী দিতেই পারিনি।
যা অবস্থা, এই ভোটকে সন্ত্রাসকবলিত বলতে বাধ্য হচ্ছি।
|
|
যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এত চাপানউতোর, মামলা, ভোট পিছনো, প্রথম দফার ভোটে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই বাহিনীকে কার্যত দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই দফায় ওই তিন জেলার মোট ৭৩ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন রাস্তাতেও ওই বাহিনীকে টহল দিতে খুবই কম দেখা গিয়েছিল বলে বাসিন্দারা একাংশের দাবি। এ বার দ্বিতীয় দফার ভোটে তিন জেলার ৬৬ শতাংশ বুথে বাহিনী থাকবে না বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় বাহিনী সেক্টর অফিসে থাকবে। তবে নানা এলাকায় তাঁরা টহল শুরু করেছেন শনিবার বিকেল থেকেই।” তিনি জানান, ভোটের দিন বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের শিবির খোলা যাবে না। ১০০ মিটারের মধ্যে কেবল ভোটার ছাড়া পরিচয় পত্র নেই এমন কাউকে যেতে দেওয়া হবে না।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৯৫৪টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র মাত্র একটি বুথসম্পন্ন। ১১৩৩টি কেন্দ্রে দু’টি করে বুথ, ১৩৪টিতে তিনটি করে বুথ, ৩৯টিতে চারটি করে বুথ ও তিন জায়গায় পাঁচটি করে বুথ রয়েছে। যে ১৩০৯টি কেন্দ্রে একাধিক বুথ রয়েছে সেখানে রাখা হতে পারে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। |
|
|
|
|
|