আতঙ্ক নিয়েই গোশুম্বা যাবে বুথের পথে
ভোট যেন সিঁদুরে মেঘ।
ভোটের নাম শুনলেই আতঙ্কের প্রহর গোনে কাটোয়ার গোশুম্বা গ্রাম। ভোট শেষে আবার আছড়ে পড়বে না তো আক্রোশ, যাবে না তো কারও প্রাণভয়ে কাঁপেন গ্রামবাসী। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার হিড়িক, রাত-বিরেতে পুলিশের দাপাদাপিভোট বলতে এই গ্রাম বোঝে শুধু অশান্তি।
কাটোয়া-করুই রাস্তা ছেড়ে এই গোশুম্বা গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি প্রাথমিক স্কুল। আশপাশে দু’একটা গাছে ইতিউতি বাঁধা রয়েছে কাস্তে হাতুড়ি, হাত বা ঘাস-ফুল আঁকা পতাকা। স্কুল পেরিয়েই কালভার্ট। সেখানে বাঁশের মাচায় বসে গ্রামের এক প্রবীণ বলেন, “অশান্তির ভয়ে এ গ্রামে ভোটের প্রচার নেই। আর পাঁচটা গ্রামের মতো মিটিং-মিছিল তো দূর, দেওয়াল লিখনও চোখে পড়বে না।” সত্যিই তাই! গোশুম্বা গ্রামের ১৮টি পাড়া ঘুরে সিপিএম বা কংগ্রেস, কারও কোনও দেওয়াল লিখন চোখে পড়ল না। টিমটিম করে রয়েছে তৃণমূলের দু’একটা দেওয়াল লিখন।
পতাকা-ফ্লেক্সের দেখা মেলে শুধু গ্রামের ঢোকার মুখে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক হানাহানির জেরে গত কয়েক বছরে এই গ্রামের ছ’জন খুন হয়েছেন। গ্রামবাসীদের দাবি, নিহতদের মধ্যে চার জন কংগ্রেসের, বাকি দু’জন সিপিএমের। গত বিধানসভা ভোটের ঠিক পরপরই কংগ্রেস কর্মী নিমাই সাহা খুন হন। বছরখানেক পরে তাঁর দেহ মেলে। এর পরেই গোশুম্বার পাশে মঙ্গলকোটের বাজার গ্রামের কাছে খেত জমিতে কাজ করার সময়ে খুন হন সিপিএমের নারায়ণ দাস। ঘটনার পরে বেশ কিছু সিপিএম কর্মীদের বাড়িতেও আগুনও লাগে। এলাকা ‘ঠান্ডা’ রাখতে এর পরে টানা পুলিশের অভিযান শুরু হয়। কংগ্রেস, সিপিএম দু’পক্ষেরই অনেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
গ্রামের ধর্মরাজতলা থেকে বেরোতেই একটা বড় বাড়ির বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন কয়েক জন। তাঁরা জানান, গ্রামে দু’টি আসনে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছেন। গ্রামের লোক হওয়ায় সকলেই তাঁদের চেনেন-জানেন। তাঁরা মনে করেন, ভোট কাকে দেবেন, মানুষ ইতিমধ্যেই তা ঠিক করে ফেলেছেন। জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়, হারাধন হাজরা-রা বলেন, “ভোটের প্রচারে নামলেই তো লক্ষ্য হয়ে যাবে। তার পরে ভোট শেষে বাড়ির চালটাও ভাঙচুর হবে। তাই কে আর যাবে?” এই কারণেই বোধহয় বিধানসভা ভোটের দু’বছর কেটে যাওয়ার পরেও ‘সিপিএম প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’- লেখাটা দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে।
রাস্তা, নিকাশি থেকে পানীয় জলসবেরই সমস্যা রয়েছে গ্রামে। রাস্তার অনেক জায়গায় নদর্মার জল উপচে টইটম্বুর। ধর্মরাজতলা থেকে দাসপাড়া যাওয়ার পথে দেখা মিলল কয়েক জন মহিলার। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলাদের মন্তব্য, “রাজনৈতিক দলগুলির উন্নয়নের দিকে মন দেওয়ার সময় কোথায়? তারা তো অশান্তি করতেই ব্যস্ত।” গ্রামেই রয়েছে আলমপুর পঞ্চায়েত দফতর। সেখানে এত দিন পুলিশ ক্যাম্প ছিল। কিন্তু গত পাঁচ দিন যাবত সেটাও উঠে গিয়েছে। মানুষের মনে ভয় আরও জাঁকিয়ে বসেছে।
সিপিএমের কাটোয়া ১ দক্ষিণ লোকাল কমিটির সদস্য মিঠুন দাস বলেন, “কেউ প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না। সবাই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, তাই প্রকাশ্যে কোনও প্রচার করা যাচ্ছে না।” কংগ্রেস নেতা মন্টু সাহা বলেন, “রঙের কৌটো ধরার মতো কাউকে পেলে তবেই না দেওয়াল লিখন হবে। কেউ প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না।” কিন্তু তাহলে তৃণমূল যে দু’একটা দেওয়াল লিখন লিখেছে, সেগুলো কী করে হল? তৃমমূল নেতা দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “নেতা স্থানীয় দু’একজন মিলে দেওয়াল লিখেছি। চারিদিকে শুধুই ভয়।” এই ‘ভয়’ নিয়েই আজ, সোমবার ভোটকেন্দ্রে যাবে সুজাপুর। না গেলে কোনও দল যদি রেগে যায়, তা হলেও যে মুশকিল। গ্রামে তাই ‘ভোট’ আর ‘ভয়’ প্রায় সমার্থক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.