সাধারণ কেন্দ্র একটিও নেই। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট এলাকায় এ বার সমস্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রই স্পর্শকাতরের তালিকায়। ও দিকে আবার কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না অধিকাংশ বুথেই। কমিশনারেট গঠনের পরে এ বারই প্রথম ভোট। নির্বিঘ্নে ভোট সারতে তাই রীতিমতো সতর্ক পুলিশ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সালানপুর, বারাবনি, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কমিশনারেটের অন্তর্গত এই সাতটি ব্লকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ৮১২টি। তার মধ্যে ১০৭টি অতি উত্তেজনাপ্রবণ, ৪৪৩টি উত্তেজনাপ্রবণ ও ২৬২টি কম উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে ধরা হয়েছে। বারাবনি, সালানপুর, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, চারটি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৩১ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২০৫ জন ও জেলা পরিষদে ২৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। দুর্গাপুর মহকুমার কমিশনারেট এলাকায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর, পাণ্ডবেশ্বর ও অন্ডাল ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ৭৭৯, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৩৮, জেলা পরিষদে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। |
বুথের পথে। ছবি: শৈলেন সরকার। |
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শিল্পাঞ্চলে মোট মোট ভোটকর্মী ৪২৫৫ জন। ৮১২টি কেন্দ্র ৯৪টি সেক্টরে বিভক্ত। সাতটি ব্লকে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। তার মধ্যে থাকছেন ২৫ জন ইনস্পেক্টর, ৩৬০ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। এ ছাড়া থাকছেন স্বয়ংক্রিয় রাইফেলধারী ১৫৩৬ জন কনস্টেবল। থাকছে রাজ্য পুলিশের বাহিনীও। রাজ্য পুলিশের ৪০ জন ইনস্পেক্টর ও ৪৫৫ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার ছাড়াও থাকছেন ১৭৪৭ জন সশস্ত্র কনস্টেবল ও ৭১৭ জন লাঠিধারী কনস্টেবল। বাড়তি সতর্কতার জন্য গ্যাস ও জলকামান-সহ আরও ৭৯ জন পুলিশকর্মীকে এলাকার সর্বত্র নির্দিষ্ট সংখ্যায় ভাগ করে টহল দেওয়ানো হবে।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের আশ্বাস, শিল্পাঞ্চলে ভোট শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিয়েছে। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল সিপিএমের। সেখানকার পরানগঞ্জ, জেমুয়া এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দেয়। পুলিশ কমিশনার জানান, বহিরাগতেরা যেন কোনও ভাবে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ১৫টি চেক পয়েন্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় রূপনারায়ণপুর, বরাকর, সালানপুর, বারাবনি এবং পাশ্ববর্তী জেলাগুলির সীমান্ত লাগোয়া দশটি জায়গা। এই জায়গাগুলিতে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তিন জন করে পুলিশ আধিকারিক ও পাঁচ জন করে কনস্টেবল থাকবেন। কমিশনারেট সূত্রে খবর, রাজ্য সশস্ত্র বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ ছ’টি দল এলাকায় বিশেষ টহল দেবে। প্রতিটি থানায় ‘হাই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি’র ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে অশান্তির খবর পুলিশ দ্রুত পায়।
প্রশাসনের এই সব কিছুকে ‘লোক দেখানো’ বলে দাবি করেছেন আসানসোলের সাংসদ সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী ও কংগ্রেসের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সহ-সভাপতি সুভাষ রায়। তাঁরা দু’জনেই অভিযোগ করেন, শনিবার রাত থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢুকেছে। কিছু জায়গায় বিরোধী ভোটার ও প্রার্থীদের রাতবিরেতে ভয়ও দেখানো হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের যদিও বক্তব্য, “পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে বলেই ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে চলেছে ওরা। ভোটপর্ব মিটলেই বোঝা যাবে, এটাও তেমনই ছিল।” |