|
|
|
|
ক্যামেরাটা ওরা ভালই বোঝে
ক্রিকেটারেরা মডেল হিসেবে কেমন? জানাচ্ছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতারা |
|
|
প্রদীপ সরকার |
|
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
ধোনির সঙ্গে আমি প্রচুর বিজ্ঞাপন করেছি। সেগুলো বেশ সিরিয়াস। একটা বিজ্ঞাপন করেছিলাম ডাবর চ্যবনপ্রাশের। তার মধ্যে ধোনির বেশ অনেকগুলো রোল ছিল। কী নিঁখুত ভাবে করেছিল অ্যাডটা। একটা বেসিক ডিসিপ্লিন আছে ওর শ্যুটিংয়ের মধ্যে। ঠিক যে ভাবে ক্রিকেটটা খেলে, সে ভাবেই যেন বিজ্ঞাপনটা শ্যুট করে ধোনি। আজকাল এত বিজ্ঞাপন করছে যে, শ্যুটিং ব্যাপারটা বেশ আয়ত্ত করে ফেলেছে। ক্যামেরার ব্যাপারটাও ভাল বোঝে। কী ভাবে দাঁড়ালে আলোটা নিতে পারবে, সেটা ওকে বলে দিতে হয় না।
বিরাট কোহলি
এই তো সে দিন বিরাটের সঙ্গে একটা বিজ্ঞাপন শ্যুট করলাম। ও ফাটাফাটি কাজ করে। ওর মুখের মধ্যে একটা আলাদা জৌলুস আছে। এমন করে ক্যাজুয়ালি একটা শট দিয়ে দেবে যে, মনেই হবে না অভিনয় করছে। এদের সকলের তুখোড় বুদ্ধি। আর বিরাটের মধ্যে একটা দুষ্টুমি রয়েছে যেটা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ও খুব সুন্দর ব্যবহার করে। হয়তো একটু হেসে দিল। তাতেই শটটা কী দারুণ হয়ে যায়! |
অর্পিতা-সচিন |
সচিন তেণ্ডুলকর
সচিনের মধ্যে একটা শিশুসুলভ ব্যাপার আছে। যাকে বলে ‘চাইল্ডলাইক ইনোসেন্স’। বিজ্ঞাপন শ্যুটিং করতে এলে কখনও মনে হয় না যে, একটা কাজ করতে এসেছে। মজার বিজ্ঞাপনগুলো ও বেশ ভাল করতে পারে। কখনও মনে হয় না একটা কাজ ওকে দেওয়া হয়েছে আর ও সেটা করছে। ওর সঙ্গে কাজ করলে বরং মনে হয় ও বিজ্ঞাপনটা ভালবেসেই শ্যুট করছে। বাচ্চারা তো ওকে দেখলে একেবারে পাগল। আর ও বাচ্চাদের সঙ্গে কী সুন্দর মিলেমিশে কাজ করে। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলটাও ভাল বোঝে আজকাল। খুব হেল্পফুল। কখনও যদি বলি আর এক বার শ্যুট করতে, তৎক্ষণাৎ তা করতে রাজি হয়ে যায় ও। |
|
|
প্রহ্লাদ কক্কর |
|
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
ধোনির নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। সেটাই ওর চার্ম-ফ্যাক্টর। খুব সাধারণ একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ও এসেছে। তাই ধোনিকে বিজ্ঞাপনে দেখলে লোকে অনুপ্রেরণা পায়। ওর মধ্যে শান্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। কোথাও চিৎকার চেঁচামেচি নেই। আর সেটাই ওর চার্ম।
ওকে নিয়ে বিজ্ঞাপন শ্যুট করার সময় একটা জিনিস লক্ষ করেছি। ধোনিকে যা কিছু করতে বলেছি, ও কোনও সময়ই ‘না’ বলেনি। সব সময় ওর মধ্যে চেষ্টা করার প্রবণতা দেখেছি।
ধোনি যে খুব দক্ষ অভিনেতা তা তো নয়। কিন্তু ধোনির একটা সহজাত ইচ্ছেশক্তি রয়েছে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার। ওর আত্মবিশ্বাসই ওকে অনেক দূর নিয়ে যায়। তাই বিজ্ঞাপনেও দেখেছি যে, ও অনেক কিছু করে পার পেয়ে গিয়েছে। হি ক্যান গেট অ্যাওয়ে উইথ ডুয়িং আ লট অব থিংস। আর যদি কোনও কিছু ও করতে না পারে, তখন শুধুমাত্র একটু পালটে দিলেই ও চালিয়ে নেয়। ধোনির জন্য আলাদা করে আমাকে লাইন লিখতে হয় না। এটা ভাবতে হয় না যে হয়তো ও এগুলো করতে পারবে না। ধোনি চেষ্টা করবে। ঠিক একজন পেশাদারের মতো। তার পর যদি সত্যিই না হয়, তখন বলবে যদি একটু বদলে দেওয়া যায়। |
রেচেল হোয়াইট-ধোনি |
বিরাট কোহলি
বিরাটকে নিয়ে আমি কখনও বিজ্ঞাপন শ্যুটিং করিনি। কিন্তু ওর অনেক বিজ্ঞাপন দেখেছি। ও বেশ ভাল অভিনেতা। আর ক্যামেরার সামনে একদম স্বতঃস্ফূর্ত। বেশ আত্মবিশ্বাসী। সচিন যেমন নম্র, বিরাটের কিন্তু ক্যামেরার সামনে বেপরোয়া একটা ইমেজ। আজকালকার অল্পবয়েসিরা এটা বেশ পছন্দ করে থাকে। ওরা নিজেরাও তো বেশ বেপরোয়া। তাই পরদায় এমন একজনকে দেখলে ওদের বেশ ভাল লাগে হয়তো। বিরাটের ওই ইমেজটার সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পায় ওরা। কিন্তু আবার অনেকের সেটা নাও ভাল লাগতে পারে। তাদের মনে হতে পারে ওটা বেশ বিরক্তিকর। তাই সব সময় ওর সতর্ক থাকাটা দরকার। যাতে ও, ওর এই বেপরোয়া ইমেজটার পরিমিত ব্যবহার করতে পারে বিজ্ঞাপনের মধ্যে।
সচিন তেণ্ডুলকর
মনে আছে প্রথম যখন সচিনকে দিয়ে পেপসির একটা কমার্শিয়াল শ্যুট করি, ওর তখন অল্প বয়েস। বিজ্ঞাপনটায় দেখানো হয়েছিল যে, একটা ছেলেকে টুয়েল্ভথ ম্যান হিসেবে নির্বাচন করা হচ্ছে আর সচিন তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মজা করে ওকে বলি, টুয়েল্ভথ ম্যান নয়, ওকে বারো জন মহিলার সঙ্গে বিজ্ঞাপনটা শ্যুট করতে হবে। সচিন ভীষণ ঘাবড়ে যায়। প্রথমেই নাকচ করে দেয়। বলে, ও একদম এ সব করতে পারবে না। আমি হেসে জানাই, ওর সঙ্গে মশকরা করছিলাম। সে যাত্রা শ্যুট করে ও।
কয়েক মাস আগে আমার বাড়ির ড্রইং রুমে ওকে নিয়ে অ্যাড শ্যুট করলাম। রয়েল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞাপন। এখন অবশ্য সচিন অনেক বেশি পরিণত। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তবে আজও যখন সচিনকে নিয়ে বিজ্ঞাপন করি, ওর কথা মাথায় রেখে আমাকে ডায়ালগ লিখতে হয়। বিজ্ঞাপনের শ্যুট করতে গিয়ে সচিনের সঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়ের বেশ মিল পাই।
সচিনকে ওর কমফোর্ট জোন থেকে সরিয়ে এনে শ্যুট করালে, সেটা ভাল হয় না। ওর স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়ে যায়। ওর চার্মটা ধরা পড়ে যখন ও খেলা সংক্রান্ত কিছু শ্যুট করে। বা যখন বিজ্ঞাপনে ওর সঙ্গে বাচ্চারা থাকে।
মডেল হিসেবে সচিনের সব থেকে বড় সম্পদ ওর নম্র ব্যবহার। লোকে জানে যে, সচিন ভাল অভিনেতা নয়। কিন্তু ওর এমন একটা ব্যাপার আছে যে, সেটা জানা সত্ত্বেও লোকে ওকে বিজ্ঞাপনে গ্রহণ করে নেয়। |
|
|
|
|
|
|