ত্রাণের জন্য চিঁড়ে-গুড় নিয়ে চার দিনের মাথায় পুরসভায় ফেরত দিলেন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। শুক্রবার ত্রাণসামগ্রী ফেরতের পরেই পুরসভার অন্দরে তা নিয়ে নানা জল্পনা দানা বাঁধছে। পুরসভা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ৪ কুইন্টাল চিঁড়ে, ৪০ কেজি গুড়, ও ৫০ টি ত্রিপল নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই দিন পুরসভায় সাড়ে ৮ কুইন্টাল চিঁড়ে ত্রাণ বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে অর্ধেকই ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই অন্যান্য কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হয়। এর পরেই তা ফিরিয়ে দেন তৃণমূল কাউন্সিলর। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত।
যদিও রঞ্জনবাবুর অভিযোগ, “যা চিঁড়ে গুড় দিয়েছে, তা মানুষের খাবার যোগ্য নয়। তাই ফেরত দিয়েছি।” তা হলে তিন দিন তা রেখে দেওয়া হল কেন? রঞ্জনবাবুর জবাব, “৯ জুলাই ত্রাণসামগ্রী পেয়েছি। পর দিন রথ ছিল। তাই দেওয়া হয় নি। জল কমে গিয়েছিল।” পাশাপাশি, এদিন রঞ্জনবাবু একটি প্লেটে চিঁড়ে-গুড় নিয়ে গিয়ে তা মেয়রের সামনে তুলে ধরেন। মেয়রের সামনেই তাঁকে অভিযোগ করতে শোনা যায়, “অপদার্থ, অর্কমণ্য ও সংখ্যালঘু মেয়র। আপনার জন্যই এমন বাজে জিনিস দেওয়া হয়েছে। আপনার মত সংখ্যালঘু বোর্ডের মেয়রের ঘরে ঢোকার কোনও ইচ্ছে নেই। কিন্তু বাধ্য হয়েই ঢুকতে হল।” |
নিয়ে যাওয়া ত্রাণ ফেরত নিয়ে পুরসভায় রঞ্জন শীলশর্মা। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই ঘটনার পরে পুরসভা আলোড়ন পড়ে যায়। এ ভাবে মেয়রের সামনে তাঁকে লক্ষ করে ওই ধরনের মন্তব্য করা নিয়ে পুরকর্মীদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বাঁধে। এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, “ত্রাণসামগ্রী তো মহকুমাশাসকের দফতর থেকে এসেছে। তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের দেওয়া জিনিসের মান নিয়ে উনি ক্ষোভ দেখিয়েছেন। কেন ওঁদের সরকার নিম্নমানের ত্রাণসামগ্রী পুরসভাকে দিয়েছে সেটা ওঁদের দলের নেতা-মন্ত্রীদের বললেই তো পারেন।” পাশাপাশি, মেয়রের প্রশ্ন, “চার দিন আগে ত্রাণ নিলেও তা খুলে দেখা হয়নি কেন? তা হলে কি ওই ওয়ার্ডে ত্রাণের প্রয়োজন ছিল না। যে সমস্ত জিনিস নিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিই কি উনি ফেরত দিয়েছেন?”
তবে তাঁর ঘরে ঢুকে রঞ্জনবাবু যে ভাবে তাঁর সমালোচনা করেছেন, সেটা অপ্রত্যাশিত নয় বলে মেয়র মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, “যিনি জেলা শিক্ষা পরিদর্শকের মুখে থুতুু দিতে পারেন, তাঁর কাছে এটাই প্রত্যাশিত। এর বেশি আশা করা যায় না।” প্রসঙ্গত, শিলিগুড়িতে গত পুরভোটের আগে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা রঞ্জনবাবু জেলা শিক্ষা পরিদর্শকের (প্রাথমিক) মুখে থুতু ছিটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ডিআই। মামলা হলে রঞ্জনবাবু আগাম জামিন নেন। তাঁকে সাসপেন্ডও করা হয়। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সাসপেনশন তুলে নেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, থুতু ছেটানোর অভিযোগে মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন।
ওই ঘটনার কথা শুনেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “ত্রাণ ফেরত দেওয়ার কথা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমাকে আগেই জানিয়েছেন। ত্রাণসামগ্রী মান নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের নেতা নুরুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ করেছেন, ত্রাণ নিয়ে দলবাজি চলছে। তিনি বলেন, “রঞ্জনবাবু কেন ত্রাণ চাইলেন? কেন তা নিলেন? ফেরতই বা দিলেন কেন? যদি স্বচ্ছতা থাকত তবে তো পরের দিনই ফেরত দিতে পারতেন। এতদিন পরে কেন দিলেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত হোক। রিপোর্ট সামনে আসা দরকার।” |