নকশার অনুমোদনের আগেই চার তলা ভবনের উপর আরও এক তলা তৈরি করার অভিযোগ ওঠে এক প্রোমোটার মনীশ অগ্রবালের বিরুদ্ধে। দুই মাইলে সেবক রোডের ঘটনা। একই ভাবে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে জ্যোতিনগরে লোকনাথ সরণিতে প্রোমোটার সঞ্জীব ঘোষ দোতলার ছাদ পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেন বলে অভিযোগ। প্রোমোটার নরেশ অগ্রবাল তাঁদের দু’টি নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রেও ভিতের কাজ শেষ করে ফেলেন। একতলার ছাদের জন্য কংক্রিটের স্তম্ভও হয়ে গিয়েছিল। অথচ কোনও ক্ষেত্রে পুরসভার তরফে নকশা অনুমোদন ছিল না বলে অভিযোগ। এমন ১১টি বাণিজ্যিক বহুতলের নকশা দীর্ঘদিন আটকে রাখা হলেও সম্প্রতি ছাড়পত্র দিয়ে বিতর্কের মুখে শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত।
অভিযোগ উঠেছে, বোর্ড মিটিঙে বিষয়টি না তুলে একক ক্ষমতায় তা দিয়েছেন মেয়র। শুধু তাই নয়, পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশও দিয়েছিলেন। |
একটি অবৈধ নির্মাণ। —ফাইল চিত্র। |
তাই বিষয়টি নিয়ে লেনদেনের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল সহ অনেকেই। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “যে সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন পুর কমিশনার সেগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে প্রশ্ন উঠবেই। লেনদেনের অভিযোগও আমার কাছে অনেকে মৌখিক ভাবে করেছেন। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে সব জানাব।” পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী তথ্য জানার আইনে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতেও চেয়েছেন।
মেয়র এ দিন বলেন, “যে ১১টি ভবনের নকশা অনুমোদন নিয়ে তাঁর সমালোচনা করা হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া তাদের নকশায় ভুল ছিল না। অনুমোদনের আগে তারা কাজ শুরু করায় ক্ষমাও চেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলি আটকে ছিল। তাই অনুমোদন করেছি।”
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা অরিন্দম মিত্র জানান, বহুতলের নকশা পাশ করানোর ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম হচ্ছে। শহরে বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে তাতে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করতে হবে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। পুরসভাকে পদক্ষেপ করতে হবে বলে তিনি দাবি করেন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “৩ টি বোর্ড মিটিংয়ে ক্ষমতাসীন কাউন্সিলররাই প্রশ্ন তুলেছিলেন। বর্তমান পুরবোর্ড সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। তার জেরে বোর্ড মিটিং পর্যন্ত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কেন তাড়াহুড়ো করে ওই সমস্ত নকশা মেয়র একাই অনুমোদন করে দিলেন। দুর্নীতি রয়েছে বলে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। বিষয় খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত দাবি করছি।”
প্রোমোটার সংস্থাগুলি অবশ্য মেয়রের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। মনীষবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে নকশা অনুমোদন আটকে ছিল। মেয়র সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা খুশি।” একই সুরে সঞ্জীব ঘোষ, নরেশ অগ্রবালরা জানিয়েছেন, ১১টি ভবনের নকশা অনুমোদন করা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছিল। তাদের বহুতলগুলির নকশা অনুমোদন হওয়ায় মেয়রের ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করে, কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখে মেয়র এ সব করছেন। এর পিছতে তাঁর অসৎ কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। তাঁকে এবং তার দলকেই জবাবদিহি করতে হবে।” |
১১টি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুর কমিশনার |
আইন সকলের ক্ষেত্রে এক হওয়া উচিত। যাতে মনে
সন্দেহ না হয়। যাঁরা
ক্ষমতায়
রয়েছেন নিরপেক্ষ
ভাবে
তাঁদের দেখা উচিত ছিল।
হরেন ঘোষ, লেখক |
অনুমোদন দেওয়া নিয়ে প্রচুর টাকা লেনদেন
হয়েছে বলে অভিযোগ শুনেছি। পুরবোর্ড অসৎ
না অক্ষম তার জবাব খুঁজছেন মানুষ।
নৃপেন দাস, বিজেপি জেলা সভাপতি |
|
অবৈধ কাজের অভিযোগ যখন উঠেছে, তা খতিয়ে
দেখে পুরসভা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া
জরুরি ছিল।
কিন্তু তা করা হল না।
শিল্পী সাহা, প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ |
আইন মানছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত দুর্নীতি
হচ্ছে। প্রচুর টাকার লেনদেন হয়েছে বলে
বাসিন্দাদের থেকে অভিযোগ পাচ্ছি।
গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী |
|
বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করে অবৈধ ভাবে
নকশা
পাশ করা হল। এতে এ ধরনের
বেআইনি
কাজের প্রবণতা বাড়বে।
প্রতুল চক্রবর্তী, প্রবীণ তৃণমূল নেতা |
পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে এই নিয়ে আলোচনা
করে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত ছিল। তা না মেনে
অগণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করা হল।
অশোক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী |
|
নকশায় কোনও ভুল ছিল না। তবে অনুমোদনের আগে নির্মাতারা কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন।
সে জন্য তাঁরা ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। আমি সব বিবেচনা করেই নকশা অনুমোদন করেছি।
গঙ্গোত্রী দত্ত, মেয়র |
|