|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
সামগ্রিক হরিনাথ চর্চার সমন্বিত রূপ |
হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬) ছিলেন গ্রামের মানুষ, প্রাতিষ্ঠানিক বিচারে প্রায়-অশিক্ষিত, নিতান্ত হত-দরিদ্র এবং কৌলীন্যহীন। কিন্তু, ‘এই বহুমাত্রিক লোকোত্তর ব্যক্তি একাধারে ছিলেন সাহিত্যশিল্পী, সংবাদ-সাময়িকপত্র পরিচালক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ-সংস্কারক, নারীকল্যাণকামী, দেশহিতৈষী, রায়ত-কৃষকপ্রেমী, সাধক ও ধর্মবেত্তা এবং নব্য-সাহিত্যসেবীদের উদার পৃষ্ঠপোষক,’ লিখছেন আবুল আহসান চৌধুরী। কাঙাল হরিনাথের সারস্বতজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রয়াস ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার প্রকাশ। মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে এই পত্রিকা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় বাইশ বছর চলেছিল। এই পত্রিকায় জমিদার থেকে সরকারের অবিচার-কুশাসনের প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করেননি হরিনাথ, তার জন্য বিপন্নও হয়েছেন। আবার মীর মশাররফ হোসেন, জলধর সেন, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, দীনেন্দ্রকুমার রায়ের মতো সাহিত্যিক-ঐতিহাসিকদের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন তিনিই। অথচ জন্মের ১৮০ বছর পেরিয়েও এই মানুষটির প্রকৃত মূল্যায়ন হয়নি। বাংলার লোক-ঐতিহ্য চর্চায় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আবুল আহসান চৌধুরী পঁচিশ বছর আগে হরিনাথ গবেষণার প্রথম ফসল প্রকাশ করেন ঢাকার বাংলা একাডেমি থেকে, এ বার তাঁর সামগ্রিক চর্চার সমন্বিত রূপ হাতে এল এ বাংলা থেকেই। কাঙাল হরিনাথ/ গ্রামীণ মনীষার প্রতিকৃতি (গাঙচিল, ৫০০.০০) বইয়ে তাঁর জীবন ও কৃতির আলোচনার সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত রচনার নির্বাচিত সংকলন।
বিশিষ্ট গদ্যশিল্পী প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬) প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার হিসেবে সুপরিচিত হলেও পদ্যও রচনা করেছেন। আছে তাঁর অন্য ধরনের রচনাও, যেমন— পুস্তক পরিচিতি, ভূমিকা, পত্রপত্রিকা সম্পর্কে অভিমত। এর অধিকাংশই স্বনামে লেখা, দু’একটি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে। এগুলি নিয়েই মলয়েন্দু দিন্দা’র সংকলন প্রমথ চৌধুরী/ অসংকলিত রচনাসম্ভার ১ (গাঙচিল, ২৫০.০০)। টীকা, রচনাপঞ্জিও রয়েছে সঙ্গে। প্রমথ চৌধুরীর সমাজসচেতন মনের হদিশ পাওয়া যায় তাঁর ‘কাগজ’ নিবন্ধটিতে: ‘সংবাদপত্র যদি তার স্বত্ব সাব্যস্ত করতে চায় তাহলে পলিটিসিয়ানদের সঙ্গে তার বিবাদ উপস্থিত হবে। কিন্তু তা’তে ভয় খেলে চলবে না। কারণ সংবাদপত্র আসলে বিসংবাদপত্র।’ ‘কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসার পরেই, আমার চারপাশের জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে দৃষ্টি সজাগ হয়। আমার অভিজ্ঞতার প্রসার ঘটে। আমার নিজের দারিদ্র, দুঃখী মানুষের সম্পর্কে, এক আত্মিক চেতনা গড়ে তোলে।’— নিজের সৃষ্টির সঙ্গে ভারতের অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক নিয়ে যেমন লিখেছেন সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮), তেমনই কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনের ভিতরে কতটা স্বাধীনতা কোনও ব্যক্তি পেতে পারে— সে প্রশ্নও নিজের সৃষ্টিতে তুলে এনেছেন তিনি। তাঁর এই সৃষ্টির অভিপ্রায় নিয়ে সত্যজিৎ চৌধুরীর মন্তব্য: ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা বনাম পার্টি শৃঙ্খলা— এই প্রশ্ন আর এক স্তরে উঠে দাঁড়ায় মনুষ্যত্ব বনাম রাজনীতির প্রশ্নে।’ তাঁকে নিয়ে সত্যজিতের বই প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি: সমরেশ বসু: আমাদের বাস্তব (একুশ শতক, ১৫০.০০)। এ বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধে সত্যজিৎ সমরেশের সৃষ্টিকে এক বিপ্রতীপের টানাপড়েনে ব্যাখ্যা করেছেন। এ এমন এক বই যেখানে সরলীকৃত মূল্যায়নের বদলে সমরেশকে চেনা যাবে বহুস্তরীয় প্রতিভার আলোয়। |
|
|
|
|
|