ময়না তদন্তের পরে স্ত্রীর দেহ নিয়ে ফেরার সময়ে মাঝপথে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের ছেড়ে চলে যান। তাই ‘আইনি’ জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় স্ত্রীর দেহ সৎকার না করে তিন ধরে বাড়িতেই রেখছিলেন। এ দিকে, দেহে পচন ধরায় এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছিল। তাই এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। শেষমেষ পুলিশের নির্দেশে শুক্রবার দেহ সৎকার হয়। ঘটনাটি বোরো থানার রামপুর গ্রামের।
মৃতা রেণুকাদেবীর (২৪) স্বামী বিশ্বনাথ হাঁসদা পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ২০০৪ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ জুলাই ভোরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল রেণুকাদেবীকে। ওই দিন তাঁর মৃত্যু হয়। কীটনাশক খেয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে। পরের দিন ময়নাতদন্ত করে দেহ বধূর বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বনাথবাবুর দাবি, “শ্বশুরবাড়ি বোরো থানার শনকুড়া গ্রামে। দেহসমেত বাড়ি ফেরার পথে শ্বশুরমশাই দিবাকর মাণ্ডি মাঝপথে আমাদের ছেড়ে চলে যান। ওঁর অনুপস্থিতিতে দেহ সৎকার করলে পাছে কোনও আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যাই। এ কারণে, ওঁর আসার অপেক্ষায় ছিলাম। ফোনেও উনি আমাদের সঙ্গে ভাল করে কথা বলেননি।” গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ কিস্কু, সীতারাম বেসরা বলেন, “দিবাকরবাবু মাঝপথে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় দেহ নিয়ে কী করব আমরা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে গ্রামের কোনও বাসিন্দা সৎকারে যোগ দিতে এগিয়ে আসেননি।”
এ দিকে, বাসিন্দা হপন টুডু, স্বপন টুডু বলেন, “একটা মরদেহ তিন দিন ধরে পড়ে রয়েছে। দেহ পচন ধরায় দূষণ ছড়াচ্ছে। অথচ ওই পরিবারের কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। বাধ্য হয়ে আমরা কয়েকজন শুক্রবার থানায় যাই।” বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, “ইতিপূর্বে রেণুকাদেবী তাঁর স্বামীর নামে বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন। বধূর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত।” বিশ্বনাথবাবু বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এক বছর আগে রেণুকা বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিল। তারপর সব মিটে গিয়েছিল। কেন ও কীটনাশক খেল বুঝতে পারছি না।” শ্বশুর দিবাকরবাবু বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে আমার স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি কাউকে না জানিয়ে চলে আসি। তবে মেয়ের এইভাবে মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না। ওরা দেহ ফেলে না রেখে সৎকার করে দিতে পারত।” |