মাঝরাত পর্যন্ত ভোট দেখল জঙ্গলমহল
ভোটগ্রহণের সময় পেরিয়ে গিয়েছিল বিকেল পাঁচটায়। তখন লাইনে থাকা ভোটারদের হাতে টোকেন ধরিয়ে হয়। ভোট চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কিন্তু ভোটার যাওয়ার পরে তল্পিতল্পা ঘোছাতে গিয়ে ভোটকর্মীরা দেখেন, কয়েকজন ভোটার টোকেন নিয়েও ভোট দেননি। বাক্স-প্যাঁটরা গোছাতে গিয়েও প্রিসাইডিং অফিসারের হাত থেমে যায়। কেন না সিল মেরে দেওয়ার পরে সেই ভোটার যদি এসে দাবি করেন যে তিনি ভোট দিতে চান, তাহলে কৈফিয়ৎ তো তাঁকেই দিতে হবে। শেষে খোঁজ-খোঁজ। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কর্মীরা কাউকে ধরে আনলেন আশপাশের কোনও দোকানের চালার নীচ থেকে। সেখানে তিনি ট্যাঁকে টোকেন গুঁজে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন। কাউকে আবার বাড়ি থেকে ডেকে আনা হল। তিনিও রাতের খাওয়া সেরে সপরিবারে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। টোকেন মিলিয়ে তবেই হাঁফ ছাড়েন ভোটকর্মীরা।
একটা-দু’টো নয়, পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর, বরাবাজার, আড়শার মতো জঙ্গমহলের কয়েকটি বুথে বৃহস্পতিবার রাতে এই কাণ্ড ঘটেছে। জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “বেশ কিছু জায়গা থেকে খবর পেয়েছি টোকেন নিয়ে গিয়ে কেউ ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। পরে তাঁদের খুঁজে নিয়ে এসে ভোট দেওয়ানো হয়। এসবের কারণেই ভোট শেষ হতে দেরি হয়েছে।”
রাতে লাইনে ভোটাররা। পুরুলিয়ার খড়িদুয়ারায়।
আবার কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোট চলেছে ঢিমে তালে। কিন্তু তার জেরে ভোট মিটতে যে রাত প্রায় কাবার হয়ে যাবে তখন ভাবতে পারেননি ভোটকর্মীরা। কাশীপুরের গগনাবাইদ গ্রামপঞ্চায়েতের চাকলতোড় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪৬ নম্বর বুথে দিনের শুরু থেকেই ভোটগ্রহণ চলে ধীরেধীরে। দুপুর পর্যন্ত ভোট পড়েছিল ৩০ শতাংশ। ওই বুথে ভোটারের সংখ্যা ১০২৫। বাসিন্দা অলোক মিশ্র, মিহির চট্টোপাধ্যায়, গোপাল বাউরিরা বলেন, “দুপুরে ভোটের লাইনে দাঁড়ালেও ভোট দিতে অনেক রাত হয়ে যায়। খিদে-তেষ্টায় খুব কষ্ট হয়েছে।” বস্তুত চাকলতোড় গ্রামের বুথে ভোটগ্রহণ ঢিমেতালে চলায় সেখানে ভোট মিটতে রাত কত গড়াবে, তা নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই চিন্তায় পড়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন। বিডিও থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের কর্তারা বারেবারেই পুলিশের কাছে গ্রামের আইন শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। পুলিশ জনিয়েছে, গভীর রাত অবধি ভোট চললেও ধৈর্য ধরেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভোটররা। এমনকী গ্রামের বাসিন্দারাই নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বুথের বাইরে আলোর ব্যবস্থা করেন। বুথে থাকা পুলিশ কর্মীদের বাড়ি থেকে চা করে এনে দেন কেউ কেউ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বুথে রাত তিনটেয় ভোটগ্রহন শেষ হয়। ১০২৫ জনের মধ্যে ভোট দেন ৯২৫ জন।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় মঙ্গলদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌতোড় সাতআনা বুথে ভোটপর্ব মেটে রাত দুটোর পরে। বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের লালপুর, নীলডির পাথুরিয়া গ্রামের বুথে ভোট চলেছে রাত দেড়টা অবধি। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের পূর্ব আড়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট চলেছে রাত একটা পর্যন্ত। একই চিত্র সাঁতুড়ি ব্লকের বালিতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরুলিয়া গ্রামের তিনটে বুথে। গড়শিকার গোয়ালবেড়িয়া, টাড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাড়াবাড়ি রামভট্টডি ও লালগড় গ্রামের বুথগুলিতেও। মানবাজার ২ ব্লকের খড়িদুয়ারা বুথেও রাত ৩টে পর্যন্ত ভোট চলে।
বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, আড়শাতে অযোধ্যাপাহাড়ের নীচে জঙ্গল এলাকাতেও ভোটপর্ব চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
বাঁকুড়ায় স্ট্রং রুমের সামনে পাহারা।
পুলিশকে দুর্ভাবনায় রেখে শেষ পর্যন্ত শান্তিতেই মিটেছে ওই এলাকার ভোট। আড়শার রাজপতি, কুলট্যাড়, তানাশি গ্রামে ভোট চলে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। বলরামপুরের তেঁতলো গ্রামপঞ্চায়েতের শুকুরডি বুথে ভোট চলে রাত তিনটের পরেও। বাঘমুণ্ডির বড়রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলরামপুরের ঘাটবেড়া কেরোয়া গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলা পঞ্চায়েতের বড় চাতরমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথেও একই ছবি ছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, জঙ্গলমহল-সহ জেলার ১৪৯২টি বুথে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট চলেছে। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো ভোটকর্মীদের একাংশের কাজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “কিছু জায়গা থেকে ভোটকর্মীরা ধীরগতিতে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ৩০১০টি বুথের মধ্যে প্রায় ২০০০ বুথেই ভোট গড়ায় অনেক রাত পর্যন্ত। ইঁদপুর ব্লকের চৌকিঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট শেষ হয় রাত প্রায় তিনটায়। বুথের এক ভোট কর্মীর কথায়, “এত রাত পর্যন্ত আগে কোনও দিন ভোটের কাজ করিনি। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও ঝড়বৃষ্টির কারণে প্রায় রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল। রাতে কার্যত টর্চের আলোতেই আমাদের কাজ সারতে হয়েছে। মাত্র ২ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী নিয়ে ভোটারদের সামলাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে।” ভোট শেষে প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ বার শান্তিতে ঘুমাতে যাচ্ছি।”

—নিজস্ব চিত্র।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.