|
|
|
|
কোথাও ভোট চলল রাত ২টো পর্যন্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আগের দিন রাতে ঘুম হয়েছে নামমাত্র। সকাল হতেই শুরু ডিউটি। চোখেমুখে ক্লান্তি। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে। কিন্তু, ঘুমনোর জো নেই! থাকবেই বা কী করে? বুথের সামনে তো তখন শতাধিক ভোটারের ভিড়। সেই ভিড় থেকে উড়ে আসছে একের পর এক তির্যক মন্তব্য, ‘দাদা, তাড়াতাড়ি করুন। রাতটা কী এখানেই কাটবে!’ ‘আমাদের কী ঘরসংসার কিছু নেই না!’ জঙ্গলমহলের একটি বুথের এক পোলিং অফিসার বলছিলেন, “সে কত রকম মন্তব্য। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ভোটারদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন। কিন্তু, কে শোনে কার কথা! ঘড়ির কাঁটা যে তখন রাত ১১টা পেরিয়েছে।” তাঁর কথায়, “ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে। আবার ভয়ও করছে। এলাকাটা তো জঙ্গলমহল। কখন কী হয়!” |
|
গভীর রাতে ভোট বাক্স নিয়ে ফিরছেন ভোটকর্মীরা। |
ভোট শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে। বিকেল ৫টার সময় তা শেষ হওয়ার কথা। অবশ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিকেল ৫টার পর পোলিং অফিসারদের আড় ভাঙার উপায় থাকে না। কারণ, বুথের সামনে ভোটারদের লাইন থাকেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বেশ কিছু বুথে রাত ১১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছিল। তবে, এ বার কিছু বুথে ভোট হল রাত ২টা পর্যন্ত! অর্থাত্, টানা ১৯ ঘন্টা! যেমন, খড়্গপুর-১ ব্লকের সাঁকোয়া এলাকার একটি বুথ। কেশিয়াড়ির মহিষমুড়া এলাকার একটি বুথ। যেখানে রাত ২টার পর হাত-পা ঝাড়ার সময় পেয়েছেন পোলিং অফিসাররা। কারণ, তার আগে পর্যন্ত বুথের সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। অবশ্য গভীর রাত পর্যন্ত ভোট হলেও কোথাও কোন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। কেশিয়াড়ির বিডিও অসীম নিয়োগী বলছিলেন, “রাত ১০টার পরও ৩৬টি বুথে ভোটাররা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকলেই সহযোগিতা করেছেন। সবকিছু তাই সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।” খড়্গপুর-২ এর বিডিও সোমা দাসের কথায়, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। বেশ কিছু বুথে রাত পর্যন্ত ভোট হলেও ভোটাররা সব রকম ভাবে সহযোগিতা করেছেন। ফলে, সব কিছু সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।” শুক্রবার দুপুরে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের সঙ্গে এক বৈঠক করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দীপক ঘোষ। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই কথা হয়। পরে জেলা পর্যবেক্ষক বলেন, “নির্বাচন নির্বিঘ্নে হয়েছে। ভোটারদের লাইন ছিল। তাই বহু বুথে রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়।” ভোটের সময়সীমা পেরোলে অর্থাত্, বিকেল ৫টার পর যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্লিপ ধরানো হয় লাইনের শেষের দিক থেকে। যাতে নতুন করে কেউ লাইনে দাঁড়াতে না-পারেন।
জেলায় বিকেল ৫টার পর ঠিক কত জন ভোটের লাইনে ছিলেন? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সংখ্যাটা খুব কম নয়। ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৪১ জন। যেখানে ভোট দিয়েছেন ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন। |
|
ভোটবাক্সের নিরাপত্তায় পুলিশ। মেদিনীপুরে তোলা ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
সকাল থেকেই কিছু বুথে শ্লথ গতিতে ভোট এগোয়। এর ফলে এই পরিস্থিতি। যেমন, খড়্গপুর-২ এবং কেশিয়াড়ির কথাই ধরা যাক। খড়্গপুর-২ এ ভোট পড়েছে ৮৯.৫৫ শতাংশ। দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়েছিল ৫৬.৫৪ শতাংশ। বিকেল ৫টার পর বিভিন্ন বুথে ৮ হাজার ৪৬৬ জন ভোটার লাইনে ছিলেন। কেশিয়াড়িতে ভোট পড়েছে ৯০.৪৩ শতাংশ। দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়েছিল ৫২.৫৫ শতাংশ। বিকেল ৫টার পর বিভিন্ন বুথে ২০ হাজার ৪৬১ জন ভোটার লাইনে ছিলেন। জঙ্গলমহল এলাকার বেশ কিছু বুথে রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। যেমন, লালগড়ের ভুলকা, বাঁদরবনি, চ্যামিটাড়া, বেলপাহাড়ির হাড়দা প্রভৃতি। ভুলকার বুথে ১১টা ৪০ পর্যন্ত ভোট চলে। বাঁদরবনির বুথে ১২টা, চ্যামিটাড়ার একটি বুথে ১১টা, হাড়দার একটি বুথে ১১টা। যে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৪১ জন ভোটার বিকেল ৫টার পর লাইনে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ঠিক কতজন কোন ব্লকের? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ছবিটা এই রকম: গড়বেতা-১ এ ১ হাজার ৪২, গড়বেতা- ২ এ ১ হাজার ৪১৬, গড়বেতা- ৩ এ ২ হাজার ৮০, শালবনিতে ৬ হাজার ৯২০, কেশপুরে ২ হাজার ৫৯৩, মেদিনীপুর সদরে ৩ হাজার ৩৭৩, ডেবরায় ৮ হাজার ১৩, খড়্গপুর- ১ এ হাজার ৮৭৪, খড়্গপুর- ২ এ ৮ হাজার ৪৬৬। অন্যদিকে, দাঁতন- ১ এ ১২ হাজার ৩২২, দাঁতন- ২ ৫ হাজার ৭২২, নারায়ণগড়ে ১১ হাজার ২২৪, পিংলায় ৪ হাজার ৬৭৯, সবংয়ে ৯ হাজার ৯৪৯, মোহনপুরে ১ হাজার ৩৫৭, কেশিয়াড়িতে ২০ হাজার ৪১৬, বিনপুর- ১ এ ৩ হাজার ৪২০, বিনপুর- ২ এ ৯ হাজার ৩৫, জামবনিতে ৩ হাজার ৫২০, সাঁকরাইলে ৪ হাজার ৭৯৫, গোপীবল্লভপুর- ১ এ ৭ হাজার ১০৫, গোপীবল্লভপুর- ২ ১ হাজার ৩৪৪, নয়াগ্রামে ১১ হাজার ২৪৪, ঝাড়গ্রামে ১২ হাজার ৩৫৩, ঘাটাল ৪ হাজার ২৬, দাসপুর- ১ এ ৭ হাজার ৫৯০, দাসপুর- ২ এ ২ হাজার ৪৯৮, চন্দ্রকোনা- ১ এ ১ হাজার ৫৮০ এবং চন্দ্রকোনা- ২ এ ১ হাজার ৭৪০।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছিলেন, “রাত পর্যন্ত ভোট হলেও সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটেছে। এটাই স্বস্তির। এ বার পঞ্চায়েতের গণনাটা এ ভাবে মিটলেই হল! অশান্তি আর ভালো লাগে না!”
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• মাঝরাত পর্যন্ত ভোট দেখল জঙ্গলমহল |
|
|
|
|
|