নজরে পূর্ব মেদিনীপুর প্রতিশ্রুতিই সার,
সেতু হল না দু’বছরেও
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার তিন বছর আগেই পূর্ব মেদিনীপুরে শাসকদল হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল তৃণমূল। নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের জোয়ারে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করেছিল তারা। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে হারিয়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের পরিচালনায় আসা নতুন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন জেলার মানুষ। কিন্তু বিপুল সেই প্রত্যাশার মান রাখতে পারেনি তৃণমূল। কৃষিপ্রধান পূর্ব মেদিনীপুরে কৃষকদের উন্নয়নেই নজর দেয়নি তারা। সেচ ব্যবস্থায় পিছিয়ে জেলা। নতুন খাল কাটা দূরের কথা, পুরনো খালগুলিই সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে শাসকদল তৃণমূল জেলায় একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি ছাড়াও কেলেঘাই-কপালেশ্বরী, সোয়াদিঘী খাল, হিজলি টাইডাল ক্যানেল সংস্কারে সাফল্যের দাবি করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, একাধিক সেতু নির্মাণ, বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও পানীয় জল প্রকল্পের মতো জরুরি পরিষেবাগুলিতে টাকা থাকা সত্ত্বেও তারা যে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনিতা বলতে বাকি রাখছে না বিরোধীরাও।
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘জেলা পরিষদ টাকা খরচ করতে না পারায় প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ কমেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই পালন করেনি। উল্টে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনের কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে।”
জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন অবশ্য দাবি করেন, ‘‘জেলা পরিষদের প্রথম দিকে রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তখন তাদের অসহযোগিতায় কাজে কিছুটা অসুবিধা হলেও পরবর্তী সময়ে জেলায় উন্নয়ন কাজে ব্যপক গতি আসে। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ করার জন্য আমরা জেলার মানুষের সমর্থন চাইছি।”
কাজ যে বাকি রয়েছে, তা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ময়নার প্রজাবাড়ে কাঁসাই নদী, চণ্ডীপুরের চকপাটনায় খাল, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কৃষ্ণগঞ্জ ও রামতারকে সোয়াদিঘী খালের সেতু তৈরির কাজের শিলান্যাস হয়েছিল। গ্রামীন পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ টাকায় কাজ করাচ্ছিল জেলা পরিষদই। কিন্তু দু’বছর কেটে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। কেন? পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যায় প্রজাবাড় সেতুর কাজ আটকে আছে। আর অন্য তিনটি সেতুর কাজ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার নিজস্ব অসুবিধায় ব্যাহত হচ্ছে।”
গ্রামের রাস্তাঘাট নিয়েও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় জেলার বেশ কিছু রাস্তা পাকা করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়নি ঠিকাদার না মেলায়। ময়না, সুতাহাটা-সহ জেলার বেশ কিছু ব্লকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ সময়সীমা পার হওয়ার পরও শেষ হয়নি। স্বজলধারা প্রকল্পে বাম আমলে ৭৬টার অনুমোদন হয়েছিল। সেগুলোর অবশ্য কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কৃষিপ্রধান এই জেলায় সামগ্রিকভাবে সেচ ব্যবস্থার চিত্রটাও অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। বোরো ধান ছাড়াও পান, ফুল ও সব্জি চাষের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২৫টি ব্লকের মধ্যে পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, এগরা, পটাশপুরের কিছু এলাকায় শুধু সেচের সুযোগ রয়েছে। সরকারি হিসেবে জেলায় মোট ৩ লক্ষ ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে চাষের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাত্‌ মোট চাষ জমির অর্ধেকেও সেচের ব্যবস্থা নেই।
এ দিকে, বাম শাসনকালের মতোই এখন বিভিন্ন পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তমলুকের এক প্রধানকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে পঞ্চায়েত প্রধান অশোক মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল দলেরই একাংশ। সামসাবাদে শেখ খুশনবির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চড়াও হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও চিকিত্‌সক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
তমলুকের এক স্কুলশিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, “তৃণমূল, সিপিএম আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শাসকদলের চরিত্র একই হয়। আমরাই শুধু মরীচিকা খুঁজে মরি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.