দৌড়টা দু’জনেই শুরু করেছিল ছোটবেলায়। বাধা ছিল চরম দারিদ্র আর পেটে চেপে রাখা খিদে। তবু প্রতিটি দিন ছিল একটু ভাল বাঁচার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের। লড়াই বৃথা যায়নি। দু’জনেই আজ রাজ্যের সেরা অ্যাথলিটদের অন্যতম।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থির নাজরা গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিনা খাতুন ও ডায়মন্ড হারবারের বাসুলডাঙার অম্বলহাঁড়া গ্রামের একাদশ শ্রেণির ছাত্র টিঙ্কু হালদার, দু’জনেই সদ্য সমাপ্ত রাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিটে সোনা জিতে নিয়েছে। ১০০ মিটার হার্ডলস রেস ও ২০০ মিটার মিডলে রেসে সোনা জিতেছে ইয়াসমিনা। ব্রোঞ্জ পেয়েছে পেন্টাথলনে। আর টিঙ্কু হালদার সোনা পেয়েছে ৩০০০ মিটার দৌড়ে।
গত ২০ জুন থেকে চারদিন ব্যাপী রাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিট শুরু হয় কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ১৯টি জেলা থেকে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিযোগীরা। অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে জেলাস্তরে প্রথম স্থানাধিকারীরাই এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। |
ইয়াসমিনা ও টিঙ্কু দু’জনেই ডায়মন্ড হারবারের রায়নগর ক্ষেত্রমোহন পৌর বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বলা বলাবাহুল্য দু’জনেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ইয়াসমিনারা দশ ভাই-বোন। দেউলা রেল স্টেশনে ছোট্ট খাবারের দোকানই সংসারের একমাত্র আয়ের পথ। মাটির দেওয়াল টালির চালের ঘরে চরম কষ্টে কিন্তু স্বপ্ন দেখে চলে ছোট্ট ইয়াসমিনা। টিঙ্কুরা পাঁচ ভাইবোন। বাবা মারা গিয়েছেন আগেই। দাদার রোজগারেই চলে টিঙ্কুর পড়াশোনা ও খেলাধূলা।
ইয়াসমিনার কথায়, “ছোট থেকেই খেলাধুলো করতে ভালবাসি। এর আগেও রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছি।” টিঙ্কুও ছোট থেকেই খেলার সঙ্গে যুক্ত। নিজেদের এই সাফল্যের সব কৃতিত্বই ইয়াসমিনা ও টিঙ্কু দিচ্ছে বিদ্যালয়ের ক্রীড়াশিক্ষক চন্দন রায়কে। চন্দনবাবুর কথায়, “আমি খেলাধূলা ভালবাসি। তাই ওদের সাধ্যমত সাহায্য করি।” তাঁর আপেক্ষ, “এদের প্রশিক্ষণের জন্য ভাল মাঠ নেই। ভাল খাওয়াদাওয়াও পায় না। খেলার সরঞ্জাম কেনার টাকা নেই। রাজ্য সরকার এই উঠতি প্রতিভাদের সাহায্যে এগিয়ে এলে বাংলাই উপকৃত হবে।”
সোনা জেতায় স্কুলের পক্ষ থেকে দুই কৃতীকেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ডায়মন্ড হারবারের পুরপ্রধান পান্না হালদার দু’জনের হাতেই দশ হাজার টাকা করে তুলে দেন।
কিন্তু এর পর?
আগামীর এই চিন্তাতেই কাতর দুই অ্যাথলিট। দু’জনেরই একই প্রশ্ন, স্কুলে না হয় চন্দন স্যার রয়েছেন। কিন্তু তারপর?” তবে লড়াই থেকে সরতে রাজি নন কেউই। |