বাবা আরএসপি, ছেলে তৃণমূল প্রার্থী
ভোটযুদ্ধের হাওয়া অশান্তি বাড়িয়েছে মণ্ডল পরিবারে
থাবার্তা প্রায় বন্ধ।
মুখ দেখাদেখি না হওয়ারই মতো। সামনাসামনি হলে তাঁরা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই বাসন্তীর মসজিদবাটির ভাস্কর মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে দিলীপের মন কষাকষি তুঙ্গে। শুধু কী তাই! দিলীপের সঙ্গে তাঁর মামা গুণসিন্ধু সর্দারের সম্পর্কেও দূরত্ব বেড়েছে।
যে পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বামপন্থী, সেই পরিবারের ছেলে হয়ে দিলীপ এ বার বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী। লড়ছেন মসজিদবাটি পঞ্চায়েতের ছ’নম্বর আসন থেকে। ওই আসনে তাঁর প্রতিপক্ষ মামা গুণসিন্ধু সর্দার। তিনি আরএসপি প্রার্থী। দিলীপের বাবা ভাস্করবাবুও ওই পঞ্চায়েত সমিতির মসজিদবাটি পঞ্চায়েতের পাঁচ নম্বর আসন থেকে লড়ছেন আরএসপি-র হয়ে। ভোটের ময়দানে মামা-ভাগ্নে, এবং বাপ-বেটার লড়াইকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সরগরম সুন্দরবনের ওই এলাকা।
দিলীপ মণ্ডল (বাঁদিকে) ও ভাস্কর মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।
বছর পঞ্চান্নর ভাস্করবাবু চাষাবাদ করে সংসার চলেন। স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী, বড় ছেলে দিলীপ, পুত্রবধূ এবং ছোট ছেলে প্রদীপকে নিয়ে তাঁর সংসার। ভাস্করবাবু বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী। দু’দফায় ১০ বছর ওই পঞ্চায়েতের আরএসপি প্রধানও ছিলেন। বছর খানেক আগে বড় ছেলের বিয়ে দেন। তার কিছু দিন পর থেকে সাংসারিক অশান্তির কারণে ছেলে-বৌমা আলাদা রান্না-খাওয়া করেন। একই বাড়ির দোতলায় থাকেন। সাংসারিক অশান্তির কারণে ভাস্করবাবুর সঙ্গে দিলীপের কথাবার্তা কম হত ঠিকই, কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু এ বার ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকে ঠিক সেটাই হল। এই ক’দিনে বাবা-ছেলের মধ্যে কথাবার্তা প্রায় হয়নি বলেই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভাস্করবাবু মনে করেন ছেলে তাঁর পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছে। তাঁর কথায়, “ভোটে দাঁড়ানোর ওর যদি এতই ইচ্ছে ছিল, আমাকে বললে পারত। আমি নিজে না দাঁড়িয়ে দলকে ওর জন্য বলতাম। কিন্তু আমাকে কিছুই না জানিয়ে ও তৃণমূলের ছেলেদের সঙ্গে মিশছিল। তার পরে ওদের হয়ে ভোটেও দাঁড়িয়ে পড়ল। এ সব মেনে নিতে পারছি না। যেটুকু সম্পর্ক ছিল, তা-ও আর রাখব না।” প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ভাগ্নের ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে ক্ষিপ্ত মামা গুণসিন্ধুবাবুও। পাশেই থাকেন। তিনিও মনে করেন দিলীপ তৃণমূলের হয়ে ভোটে না দাঁড়ালেই ভাল করত। তিনি বলেন, “আগেও আমি এই এলাকা থেকে নির্বাচনে জিতেছি। এলাকার মানুষ আমাকে সমর্থন করেন। সেটা ও জানে। তা সত্ত্বেও ও আমার বিপক্ষে দাঁড়াল। ছেলেবেলা থেকে ও আমার কত আদরের ছিল। আর এখন, এমন একটা কাজ করল আর কথা বলতেই ইচ্ছে করে না। তবু ওর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।”
বাবা-মামা বিপক্ষে। কী ভাবছেন দিলীপ? কেনই বা পরিবারিক মতাদর্শের উল্টো স্রোতে হাঁটছেন?
বছর ত্রিশের যুবকের কথায়, “বামপন্থীদের অনেক কাজ আমার ভাল লাগত না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ, মানসিকতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। দল আমার প্রতি আস্থা রেখে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে চাই।” ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁর যুক্তি, “অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাকি। আশা করছি জিতে সেই সব কাজ করতে পারব। মনে হয় সকলেই আমাকে সমর্থন করবেন।” কিন্তু এই ভোটের ময়দানে লড়তে নেমে বাবা-মামা যে তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন? দিলীপ অবশ্য এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি মনে করেন, ভোট মিটে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
জল যে এত দূর গড়িয়েছে, দিন দুয়েক আগেও তা টের পাননি লক্ষ্মীদেবী। কিডনিতে অস্ত্রোপচার হওয়ায় তিনি এখনও শয্যাশায়ী। ছেলে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছে শুনেও তিনি বিশেষ মাথা ঘামাননি। তাঁর কথায়, “কী আর বলব! আমার কিছু বলার নেই।” তাঁর ছোট ছেলে প্রদীপ অবশ্য বাবা-মামাকেই সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন। পড়শিরা দ্বিধাগ্রস্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.