|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
ঘাড় ধরে বার করে দেব |
শাশুড়ি ভবানী ঘোষ এ ভাবেই শাসন করেন তাঁর বৌমাকে। ‘তোমায় আমায় মিলে’ ধারাবাহিকে।
ছোট পর্দার সেই ‘অত্যাচারী শাশুড়ি’ অভিনেত্রী তুলিকা বসু। তাঁকে সওয়াল করলেন সঙ্গীতা ঘোষ |
পত্রিকা: যা কাণ্ড করছেন, যে ভাবে অত্যাচার করছেন পুত্রবধূকে, যে কোনও দিন গ্রেফতার হবেন...
তুলিকা: (হাসতে হাসতে) তা হলে তো বলতে হয় চরিত্রটা সফল। ভবানী একেবারে অশিক্ষিত, তাঁর কাছে বৌদের জীবন হচ্ছে সংসারের কাজ করা আর পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া। বাইরের পৃথিবীটা যে কী, কিছুই জানেন না। অশিক্ষা থেকে অনেক সময় কূপমণ্ডূক হয়ে পড়ে মানুষ, সেই ব্যাপারটা হয়েছে মহিলার।
পত্রিকা: সিরিয়ালের পটভূমি যখন কলকাতা ২০১৩, তখন এই রকম মানসিকতা ও আচার আচরণ কেন!
তুলিকা: চরিত্রটার কিন্তু অনেক শেড আছে। উনি কখনও সত্যি সত্যিই মা। খুব মানবিক। আবার কখনও বর্বর। আর ওর ব্যবহারের নানা গতিবিধি দেখে অনেকের মনে হতে পারে, আরে এ কী অত্যাচার। কারও মনে হতে পারে, সংসারের ক্ষেত্রে মহিলা কী যত্নশীলা। আবার কারও মনে হতে পারে, বাহ্ বৌটাকে কী টাইটে রেখেছে।
পত্রিকা: কিন্তু আজকের শহুরে জীবনে এমন একটা দজ্জাল ভবানী ঘোষকে সংসারে সহ্য করে নেওয়াটা কি সম্ভব?
তুলিকা: বিশ্বাস করুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর মহিলার মধ্যেও আমি ভবানীর চরিত্রের কিছু উপাদান দেখেছি। তবে তাঁর একটা শিক্ষার প্রলেপ ছিল। কিন্তু অন্তরটা... |
|
পত্রিকা: ভবানীকে সহ্য করতে পারছেন? বন্ধুবান্ধব, বাড়ির লোকেরা যাচ্ছেতাই বলছেন না?
তুলিকা: হ্যাঁ বলছেন তো। বলছেন, কী করে এমন চরিত্রে দিনের পর দিন অভিনয় করে যাচ্ছি। সিরিয়াল, নাটক, সিনেমা, যাই করি না কেন, সেখানে একটা বার্তা বা শিক্ষা থাকলে ভাল লাগে। এখানে যেমন, সম্পর্ক কেমন হয়, কেমন হওয়া উচিত, কেমন হলে ভাল হয়... কেমনটা দরকার, কী কী দরকার নেই, সম্পর্কের মধ্যে সীমারেখা কোথায় টানা উচিত... ভবানী ও তাঁর পরিবারকে দেখে সেটা কিছুটা শেখা যায়।
পত্রিকা: মানে আপনি যখন শাশুড়ি হবেন, তখন কী কী করবেন না?
তুলিকা: (হাসতে হাসতে) ছেলে সবে সেকেন্ড ইয়ারে। আগে বৌমা আসুক তো। তবে অবশ্যই ভবানী হব না।
পত্রিকা: তুলিকা চান না ভবানীর মধ্যে পরিবর্তন আসুক? কোন দিকে মোড় নেবে সিরিয়াল?
তুলিকা: টিভিতে কাজ করতে করতে বুঝতে পেরেছি, মেগা সিরিয়ালটা জীবনের মতো। কাল কী হবে জানি না। অবশ্য একটা ওয়ান লাইনার থাকে। আমি খুব বেশি জানতেও চাই না সিরিয়াল কোন দিকে মোড় নেবে। তাহলে মজাটা থাকে না। আজ এমন, কাল তেমন, পরশু অন্য রকম। আর সিরিয়ালের চরিত্রে কী পরিবর্তন ঘটবে তাতে আমার চাওয়া বা না-চাওয়াটা কোনও ব্যাপার না। আর একটা কথা। এই সিরিয়ালে আমি সত্যি সত্যি দরবেশ বানিয়েছি। এক জন অবশ্য সাহায্য করেছেন।
পত্রিকা: ছোটপর্দায় আপনার কাজ শুরু ’৯৬ সালে ‘এ বার জমবে মজা’ দিয়ে। কিন্তু তার পরে হঠাৎ ছেদ পড়েছিল কেন?
তুলিকা: বাচ্চা তখন ছোট ছিল বলে কাজ চালিয়ে যেতে পারিনি। তার পর ’৯৮ সালে যিশু দাশগুপ্তের ‘মহাপ্রভু’-তে নিমাইয়ের মাসি সর্বজয়ার ভূমিকা। সেই আমার হাঁটা শুরু ‘পৌষ ফাগুনের পালা’, ‘একক দশক শতক’, ‘তৃষ্ণা’, ‘এক আকাশের নীচে’। তখন নাটকও করতাম। টিভি-র অনেক কাজ ছেড়েছি নাটকের স্বার্থে।
পত্রিকা: নাটক করতেন?
তুলিকা: ছেলেবেলায় নাকতলার পাড়ায় নাটক, শ্রুতিনাটক লেগেই থাকত। জগন্নাথ বসুর কাছে আবৃত্তি শিখেছি। টিভিতে কাজ করতে এসে বুঝলাম হাত-পায়ের মুভমেন্ট শেখাটা দরকার। রজতাভ দত্ত মানে রণিদা নিয়ে গেলেন নাটক করতে। সেখানে চন্দন সেনকে পেলাম। উনি আমার নাট্যগুরু। আমাকে শিখিয়েছেন কোনও চরিত্রকে কী ভাবে দেখতে হয়, বুঝতে হয়। আট/নয় বছর নাটক করেছি। ‘সূর্যশিখা’, ‘বাসনাবৃক্ষ মূলে’, ‘সুনেত্রা’, ‘দরদী’...।
পত্রিকা: আবার তো সেই টিভিতেই ফেরত এলেন।
তুলিকা: কেন? বড় পর্দায়ও তো কাজ করেছি। টেলিফিল্ম করেছি। সিনেমা করেছি। ‘প্রেম আমার’, ‘তুমি যে আমার’, ‘চ্যালেঞ্জ’... ‘ইতি মৃণালিনী’-তে অপর্ণা সেনের সঙ্গে স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করেছি। এর পর রঙ্গন চক্রবর্তীর ‘বাড়ি তার বাংলা’। সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘শেষের কবিতা’য় যোগমায়া।
পত্রিকা: যোগমায়া মানে মায়ের ভূমিকা, টিভিতে কিন্তু আপনি জেঠিমা-মা-শাশুড়ির ভূমিকায় এক্কেবারে পাকা জায়গা করে নিয়েছেন।
তুলিকা: এটা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ থেকে শুরু হয়েছে। অবশ্য রবি ওঝা ‘নীড় ভাঙা ঝড়’য়েও আমাকে দিয়ে বয়স্কর ভূমিকা করিয়েছেন। এখন আবার ভবানী। তবে কী জানেন তো, আমি তো অভিনেত্রী, পারফর্মার। বাস্তবে যে চরিত্রটা নই, সেটাই সার্থক ভাবে ফুটিয়ে তোলা তো আমার কাজ।
পত্রিকা: তবুও বলব একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন। নিরূপা রায় যেমন বলিউডের ‘মা’ হয়ে গিয়েছিলেন।
তুলিকা: দারুণ খুশি হব যদি নিরূপা রায় হতে পারি। অবশ্য হিন্দিটা ভাল বলতে পারি না।
পত্রিকা: কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেন?
তুলিকা: (একটু ভেবে) আমার কাছে সব চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ভূমিকাই আমার কাছে ‘ড্রিম রোল’।
|
বৌমা vs শাশুড়ি
আইন কী বলে, জানালেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য |
বৌমার হাতিয়ার |
শাশুড়ি বৌমাকে ঘাড় ধরে বার করে দিতে পারেন না। মারধরের তো প্রশ্নই নেই। মানসিক অত্যাচার করলেও তার জন্য আইন আছে। আইনগুলির অন্যতম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫ (পারিবারিক নির্যাতন আইন)। এই আইনে বৌমাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়ার সুযোগ আছে। মামলা শেষ হওয়ার অপেক্ষা না-করে ম্যাজিস্ট্রেট অবিলম্বে অন্তর্বর্তী রায় দিতে পারেন। অভিযুক্ত পক্ষ আদালতে হাজির না-থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেট একতরফা রায় দিতে পারেন। আইনটি ‘অমনিবাস প্রোটেকশন’ দেয়। অর্থাৎ, একই রায়ে সব ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে।
যেমন, ১. বৌমার উপর যাতে আর কোনও অত্যাচার না-হয় তার জন্য নির্দেশ, ২. মামলা চলাকালীন শ্বশুরবাড়িতে থাকা, ৩. ছোট বাচ্চা থাকলে তার কাস্টডি পাওয়া, ৪. ভরণপোষণ ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থান জোগাতে হবে শ্বশুরবাড়িকে, ৫. বৌমা ক্ষতিপূরণও চাইতে পারেন।
এ ছাড়াও আলাদা করে ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) আইনে ৪৯৮-এ (বধূ নির্যাতন), ১২৫ (খোরপোশ) ধারায় মামলা করতে পারেন বৌমা। দেওয়ানি (সিভিল) আইনে মামলা করেও খোরপোশ চাওয়া যায়। তবে এখানে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্টের মতো খুব তাড়াতাড়ি কোনও একতরফা রায় পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্তর্বর্তী রায় পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা অভিযুক্ত পক্ষ আদালতে হাজিরা দেওয়ার পরই।
এমন হল যে, বৌমা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্টে আবেদন করার পাশাপাশি ১২৫ ধারায় খোরপোশের মামলা করলেন। এবং দেওয়ানি বিধি মারফতও খোরপোশ চাইলেন। এমন হতেই পারে যে, তিনটি মামলাতেই আর্থিক ভরণপোষণের নির্দেশ দেওয়া হল। তবে সে ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট/বিচারক একটি সামঞ্জস্য রেখে অর্থের পরিমাণ ঠিক করে দেন।
|
শাশুড়ির রক্ষাকবচ |
বৌমা যদি শাশুড়িকে অত্যাচার করেন, তার জন্যও আইন আছে। অপরাধের ধরন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী শাশুড়ি মামলা করতে পারেন। ভারতীয় ফৌজদারি আইনে ৫০৪, ৫০৬, ৩২৩, ৩২৪ প্রভৃতি ধারায়। গালাগালি, মারধর ইত্যাদি অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণত এই সব ধারায় মামলা হয়। বৌমার কাছ থেকে খোরপোশ পাওয়ার সুযোগ নেই। |
সাক্ষাৎকার: সঙ্গীতা ঘোষ |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|