|
|
|
|
ভোট ভালই, খুশি ডান-বাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শেষমেশ পশ্চিমে ভোটদানের হার গিয়ে দাঁড়াল ৮৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার ভোট চলাকালীন একটা সময়ে মনে হয়েছিল, এ বার ভোটদানের হার খুব বেশি হবে না। কারণ, সকাল থেকে হিসেব এগোচ্ছিল শ্লথ গতিতে। সকাল ৯টা নাগাদ ভোটদানের হার ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। বেলা ১২টা নাগাদ প্রায় ৩৪ শতাংশ। দুপুর ২টো নাগাদ প্রায় ৫৫ শতাংশ। মনে হয়েছিল, ভোটদানের হার খুব বেশি হলে ৭৫-৭৬ শতাংশে গিয়ে আটকে যাবে। তবে তা হল না। জেলায় ভোট পড়ল প্রায় ৮৬ শতাংশ। এত মানুষ ভোট দেওয়ায় খুশি জেলা পুলিশ-প্রশাসন। এমনকী, শাসক-বিরোধী দুই পক্ষও।
এত বেশি ভোটদানের হার কীসের ইঙ্গিত? এ ক্ষেত্রে অবশ্য শাসক-বিরোধী, প্রধান দুই প্রতিপক্ষের জবাব দুই রকম। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “মানুষ উত্সবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। সিপিএম মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার সবই কেড়ে নিয়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর সেই সব অধিকারই মানুষ ফিরে পেয়েছে!”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “চেষ্টা হয়েছিল, মানুষ যাতে ভোট দিতে না-পারে। শেষমেশ ভোটাদানে মানুষের এই আগ্রহ অভিনন্দনযোগ্য। সে আমরা হারি-জিতি যাই হোক!”
শুক্রবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট পড়েছে ৮৫.৯০ শতাংশ। জেলার বহু বুথে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোট পড়েছে জঙ্গলমহলের সাঁকরাইলে, ৯০.৮৬। সবথেকে কম ভোট পড়েছে দাসপুর ২-এ, ৭৫.৫৫। আর একটি মাত্র ব্লকে ৮০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। সেটি ঘাটাল৭৯.৫০। বাকি সব ব্লকেই ভোটদানের হার ৮০ শতাংশের বেশি। ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে আর একটি ব্লকে। সেটি কেশিয়াড়ি, ৯০.৪৩।
জেলার বাকি ২৫টি ব্লকে ভোটদানের হার ঠিক কী রকম?
ওই সূত্র জানিয়েছে, গড়বেতা ১-এ ভোট পড়েছে ৮৬.৭৪ শতাংশ, গড়বেতা ২-এ ৮৯.১৫ শতাংশ, গড়বেতা ৩-এ ৮৭.১৮ শতাংশ, শালবনিতে ৮৯.৫৫ শতাংশ, কেশপুরে ৮৭.৭৬ শতাংশ, মেদিনীপুর সদরে ৮৬.৯৯ শতাংশ, ডেবরায় ৮৮.৩৬ শতাংশ, খড়্গপুর ১ -এ ৮৯.৫১, খড়্গপুর ২-এ ৮৯.৫৫। অন্য দিকে, দাঁতন ১-এ ভোট পড়েছে ৮৭.৭৪ শতাংশ। দাঁতন ২-এ ৮৫.৮৬, নারায়ণগড়ে ৮৯.২৮, পিংলায় ৮০.৫০, সবংয়ে ৮৬.৯৫, মোহনপুরে ৮১.৯৫, বিনপুর ১-এ ৮৪.৮৭, বিনপুর ২-এ ৮২.৪৭, জামবনিতে ৮২.৩৫, গোপীবল্লভপুর ১-এ ৮৫.৫২, গোপীবল্লভপুর ২-এ ৮৪.৮৬, নয়াগ্রামে ৮৮.৩৯, ঝাড়গ্রামে ৮৬.৮৯, চন্দ্রকোনা ১-এ ৮৭.৭৬, চন্দ্রকোনা ২-এ ৮৮.২৩ এবং দাসপুর ১-এ ৮০.৩৫।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় ভোটদানের এই হারে খুশি। জেলার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দীপক ঘোষ বলেন, “বহু বুথে রাত পর্যন্ত ভোটারদের লাইন ছিল। নির্বিঘ্নেই সমস্ত কিছু হয়েছে।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এই কৃতিত্ব শুধু পুলিশ-প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নয়, মানুষেরও। মানুষের আগ্রহ না-থাকলে প্রায় ৮৬ শতাংশ ভোট পড়ে না।” তবে ২০০৮ সালের পরিসংখ্যানকে টপকানো যায়নি। ওই বছর পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। তখন জেলার একটা বড় অংশে আবার মাওবাদীদের উপদ্রব চলছিল। তার মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সারতে হয়। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার প্রায় ২৯ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন প্রায় ২৬ লক্ষ ভোটার। আর এ বার প্রায় ৩৪ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ২৯ লক্ষ ভোটার।
কী হবে ভোটের ফলাফল? পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩ হাজার ৮৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৭৯৮টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৬৭টি জেলা পরিষদ আসনের ভবিষ্যত্ কী? নির্বাচন পেরোতে চুলচেরা হিসেবনিকেষ চলছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরে। উত্তরের অপেক্ষায় সকলেই। যে উত্তরটা জানা যাবে ২৯ জুলাই। গণনার পরে। |
|
|
|
|
|