|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
বেহাল দাতিয়া |
সংস্কারের অপেক্ষায়
শান্তনু ঘোষ ও প্রসেনজিৎ পাঠক |
কে করবে কাজ?
তা নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে চাপানউতোর চলছিল কেএমডিএ এবং পুরসভার মধ্যে। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি!
সম্প্রতি কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতেই ভাসল এলাকা। কেননা, যে খালের মধ্য দিয়ে এলাকার জমা জল বের হওয়ার কথা, সেটাই সংস্কারের অভাবে মজে রয়েছে। জলভাসি হওয়ার পরেই অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তড়িঘড়ি মহাকরণে মন্ত্রী, বিধায়ক ও আমলাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাজ কে করবে তা নিয়ে আলোচনা পরে হবে। তবে পুরোদমে বর্ষা আসার আগেই কামারহাটির ওই মজে যাওয়া দাতিয়া খাল সংস্কার করে দেবে সেচ দফতর।
কামারহাটি পুর-এলাকার জল নিকাশির মূল মাধ্যম দাতিয়া খাল। কামারহাটির ১১ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া পানিহাটি পুর-এলাকার একটি রবার কারখানার পাশ থেকে শুরু হয়ে পুর-এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের এল-৯ বাসস্ট্যান্ডের কাছে এসে শেষ হয়েছে ওই খালটি। |
|
শেষ প্রান্তে আসার পর খালের জল বিটি রোডের নীচে বসানো কমবেশি ৮০ ফুট দীর্ঘ ও ৮ ফুট পরিধির হিউম পাইপের মধ্য দিয়ে বিটি রোডের পূর্বে বাগজোলার ‘জিরো পয়েন্টে’ পড়েছে। পুরসভা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খালটির দৈর্ঘ্য ১৫০০ মিটার এবং প্রস্থ হল, উৎপত্তিস্থলে ৮ মিটার ও শেষ প্রান্তে ৯ মিটার। খালে জলস্তরের উচ্চতা ২.১ মিটার। গত ৫ বছর এই খালের সংস্কার হয়নি। ফলে পলি জমে খালের নাব্যতা কমে গিয়েছে। দাতিয়ার যে চেহারা থাকার কথা, বাস্তবে দাঁড়িয়েছে তার অর্ধেকেরও কম। যেখানে ৯ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৩০ ফুট প্রস্থ থাকার কথা, সেখানে কোথাও কোথাও ২ বা ৩ মিটার প্রস্থ দাঁড়িয়েছে।
বিটি রোডের নীচে যে হিউম পাইপের মধ্য দিয়ে খালের জল বিটি রোডের পূর্বে বাগজোলায় পড়ছে, সেই নিকাশিমুখও অপরিসর। এই হিউম পাইপের মধ্যেও অজস্র আবর্জনা জমায় বর্ষার জল এই পাইপের মুখে ধাক্কা খেতে থাকে। খালের জলস্তর বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড দীর্ঘ ক্ষণ জলবন্দি থাকে। সম্প্রতি ‘বরাহনগর-কামারহাটি জয়েন্ট ওয়াটার ওয়ার্কর্স’-এর পরিত্যক্ত জলও পড়ছে দাতিয়ায়। সেই সঙ্গেই খালে এসে পড়ছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের বর্জ্য পলিমাটিও। তাই খালের নাব্যতা দ্রুত কমছে।
সিপিএম পরিচালিত কামারহাটি পুরসভা সূত্রে খবর, দাতিয়া খাল সংস্কারের দায়িত্ব পুরসভারই। কিন্তু কেএমডিএ-র কাজের ফলে পলি পড়ে খাল বুজে যাওয়ায় সেই পলি তোলার জন্য বেশ কয়েক বার চিঠি পাঠানো হয়েছে কেএমডিএ-কে। কিন্তু কাজ হয়নি। পুর-চেয়ারম্যান তমাল দে বলেন, “পলি তোলার জন্য বেশ কয়েক বার চিঠি দেওয়ার পরে মাস দু’য়েক আগে কেএমডিএ টেন্ডারও করে। কিন্তু কেন কাজ হল না বলতে পারব না।” পরে পুরসভা লোক নামিয়ে খাল সংস্কারের চেষ্টা করলেও তা বিফলে যায়। কেননা, পুরসভার সেই কাজের তেমন পরিকাঠামো না থাকায় টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি সামলানো যায়নি বলেই মন্তব্য করেন তমালবাবু। কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, “কাজটি আমাদেরই করার কথা। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলেও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি।” |
|
সম্প্রতি টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিতে জলবন্দি কামারহাটির পরিস্থিতি নিয়ে মহাকরণে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করেন এলাকার সাংসদ সৌগত রায়। এর পরেই রাজ্যের পাঁচটি পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পুরসভাগুলির আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত হয়, পুরোদমে বর্ষার আগে কামারহাটির নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিতে দাতিয়া ও উদয়পুর খাল সংস্কার করবে সেচ দফতর। রাজীববাবু বলেন, “পুরমন্ত্রীর অনুরোধেই ইঞ্জিনিয়ারদের বলেছি আমাদের পরিকাঠামো দিয়ে খালগুলি আপাতত সংস্কার করে দিতে, যাতে পুরোদমে বর্ষার আগে নিকাশি সমস্যা দূর হয়।”
এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই আজ খালটির এই অবস্থা। দীর্ঘ দিন খালের সংস্কারই করা হয়নি। তবুও এলাকার জল জমার সমস্যা দূর করতে আমি সেচমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দাতিয়া খালের সংস্কারের জন্য বলেছিলাম। তবে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মিত্র বাগান এলাকায় খালের সমস্যা সব থেকে বেশি। তাই স্থানীয় কাউন্সিলরকেও বলেছি পুরসভার সঙ্গে কথা বলতে।” |
ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|