উত্তর কলকাতা
শোভাবাজার বাজার
অগ্নি-সুরক্ষায় নলকূপ
বশেষে শোভাবাজার বাজারকে আগুন থেকে বাঁচাতে নলকূপ তৈরির কাজ শুরু করল কলকাতা পুরসভা। সাহায্য করছে রাজ্য সরকার। এতে বাজার-সংলগ্ন এলাকাতেও আগুন নেভাতে সুবিধা হবে বলে দাবি পুরকর্তৃপক্ষের। কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে পুরসভার আশা।
পর পর কয়েকটি বাজারে আগুন লাগার পরে টনক নড়ে প্রশাসনের। রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্স বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখে। দেখা যায় এ শহরের অধিকাংশ বাজারের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে আগুন লাগলে জল পাওয়া যায় না। ঠিক হয় বাজারগুলির কাছাকাছি জলের ব্যবস্থা রাখা হবে। স্থির হয়, যে সব বাজারে জায়গা রয়েছে সেখানে জলাধার তৈরি হবে। যেখানে নেই, সেখানে গভীর নলকূপ তৈরি হবে।
পুরসভা সূত্রে খবর, এর মধ্যেই অরফ্যানগঞ্জ মার্কেট, পোদ্দার কোর্ট, নন্দরাম মার্কেট, ওল্ড চায়নাবাজার, মহাত্মা গাঁধী বাজার, মহর্ষি দেবেন্দ্র রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, রাজাবাজারে জলের ব্যবস্থা হয়েছে।
এ ছাড়াও পুরসভা দমকলকে ৮২টি গভীর নলকূপ ব্যবহারের জন্য দিয়েছে। শহর জুড়ে আরও ১২টি নলকূপ তৈরি করা হচ্ছে। নলকূপগুলি পুরসভার পর্যবেক্ষণে থাকবে বলে পুরকর্তৃপক্ষের দাবি।
দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, “কলকাতা ও শহরতলির যে বাজারগুলিতে জলের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলাধার বা গভীর নলকূপ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভার সহযোগিতায় দমকল দফতর বেশ কিছু পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পটির জন্য অর্থ মূলত সাংসদ তহবিল থেকে আসবে।”
টাস্ক ফোর্স শোভাবাজার বাজারও ঘুরে দেখে। দেখা যায় এখানেও জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই শোভাবাজার বাজারে প্রথমে জলাধার তৈরির কথা ভাবা হয়। কিন্তু জায়গার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই গভীর নলকূপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার এবং পুরসভা।
কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরসভার দাবি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
এই বাজারের পরিকাঠামোরও খারাপ অবস্থা। পুরসভা সূত্রে খবর, বাজারটি বেসরকারি। তাই পুরসভা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “শোভাবাজার বাজারে জলাধার তৈরির জায়গা নেই। তাই একটি গভীর নলকূপ তৈরি করা হচ্ছে। তবে বাজারের পরিকাঠামো বেশ খারাপ।”
পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালি সাহা বলেন, “শোভাবাজার এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে আগুন লাগলে জলের ব্যবস্থা নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত। বাজারের মধ্যে জল সরবরাহের জন্য লাইন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কাউন্সিলর তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।” শোভাবাজার বাজারের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য রথীন্দ্রনারায়ণ দেবের কথায়: “অগ্নিনির্বাপণের জন্য নলকূপ তৈরি হচ্ছে। এই চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বাজারটি ব্যবসায়ী সমিতিকে ৯০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া ছিল। ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে লিজের মেয়াদ শেষ হয়। লিজের পুনর্নবীকরণ হয়নি। কিন্তু তার পরেও ব্যবসায়ী সমিতি বেআইনি ভাবে বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নেন। আমরা কিছুই পাই না। এমনকী, বাজারের দখলও নিতে পারিনি। তাই পরিকাঠামো উন্নত করা সম্ভব হয়নি।” শোভাবাজার বাজার সমিতির সম্পাদক প্রদীপকুমার গুহ বলেন, “অগ্নি প্রতিরোধে এই ধরনের জলের উৎস থাকা জরুরি। স্থানীয় কাউন্সিলর এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। বাজারের পরিকাঠামো বেশ খারাপ। বাজার কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। বাজারের পরিষেবা সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্যই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.