পাতেও স্মার্ট
শ্চিমি দেশগুলোর খাদ্যসম্ভারের লিস্ট নেহাৎ ছোট নয়। স্বাদে-গন্ধে-রন্ধনপ্রণালীতে সেই সব খাদ্য আবার এশীয় ডেলিকেসির থেকে অনেকটাই আলাদা। অবশ্য এই বিশ্বায়নের কালে ভোজনরসিক বাঙালির কাছে ‘ওয়ার্ল্ড ক্যুইজিন’-এর প্রায় কোনও স্বাদই অচেনা নয়। এক দিকে যেমন আছে ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ বা ইতালিয়ান, অন্য দিকে তেমনই রয়েছে চিনা, জাপানি, মোগলাই বা উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারতীয় খানা। বৈচিত্র-সন্ধানী বাঙালি রসনার সঙ্গে তাল মেলাতে তাই শহরের আনাচে-কানাচে মাঝেমধ্যেই গজিয়ে ওঠে হরেক কিসিমের রেস্তোরা। সেই তালিকাতেই এ বার নতুন সংযোজন ‘স্মার্ট কলকাতাদ্য রেস্তোরাঁ’।
কন্টিনেন্টাল এবং ওরিয়েন্টাল এই দু’রকম ভোজনের বন্দোবস্ত নিয়েই শহরে হাজির ‘স্মার্ট কলকাতা’। কন্টিনেন্টালের তালিকায় স্যুপ, অ্যাপেটাইজার থেকে স্যালাড এবং মেন কোর্স সব কিছুতেই রয়েছে বিলিতি ছোঁয়া।
মেনুটা সব অর্থেই বিশ্বজনীন। কারণ, স্যুপের লিস্টিতে রয়েছে খাস ইতালিয়ান স্যুপ মিনেস্ত্রোন দি ভেরদিওর, শিটাকে মাশরুম এবং থাইম সহযোগে আসল হাঙ্গেরিয়ান ওয়াইল্ড মাশরুম স্যুপ, জার্মান গ্রিন পি স্যুপ, ফরাসি প্রন কনসোম এবং খাঁটি ইংলিশ ক্রিম অফ ব্রকোলি স্যুপ। খিদেটাকে আর একটু চাগিয়ে দিতে থাকছে কুড়মুড়ে করে ভাজা কর্ন আর জলেপেনো, আসল রিকোটা চিজের সঙ্গে ডিপ ফ্রায়েড বটম মাশরুম, চিকেন রোলার্স, কুইক টোস্ড টাইগার প্রন, বালসামিক ভিনিগার দিয়ে তৈরি টক-ঝাল পেপার চিকেনের মতো কিছু সুখাদ্য।
বিলিতি মেন কোর্সে রয়েছে নিখাদ নিরিমিষ এবং আমিষ দুইয়েরই অনুষঙ্গ। ‘স্মার্ট কলকাতা’র রূপকার অম্বরীশ মজুমদার এবং তাঁর স্ত্রী জিগীষা আসল ইতালিয়ান চিজ এবং অলিভ তেলের ব্যাপারে কোনও সমঝোতা করেননি। তাই মেন কোর্সের তালিকায় রয়েছে পাস্তা এবং রিসোতোর এক অনন্য সম্ভার। রয়েছে পার্মেসান চিজ সহযোগে স্প্যাগেটি আগলিও ওলিও, স্যাফরন চিজ সস দিয়ে স্পিনাচ র্যাভিওলি, ফাঙ্গি সস সহযোগে রিসোতো দি ফাঙ্গি, পেনে অ্যালফ্রেডো, রাশিয়ান ডেলিকেসি পার্সলে রাইসের সঙ্গে কটেজ চিজ শাসলিক। কোনওটাই বেশি রগরগে নয়, কাজেই স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখা যাবে দিব্যি।
আমিষ মেন কোর্সের দুনিয়ায় রয়েছে কিছু চেনা কিছু অচেনা পদ। যাঁদের মোটামুটি রেস্তোরাঁয় ঘুরে ঘুরে খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস রয়েছে, তাঁদের কাছে ফুসিলি অ্যারাবিয়াতা, সিলান্ত্রো চিকেন বা রিসোতো দি চিকেন পরিচিত। ‘স্মার্ট কলকাতা’য় চেনা ওই পদগুলোর সঙ্গে রয়েছে তুলনায় কম চেনা ফরাসি খাদ্য চিকেন মারেঙ্গো, ব্রাউন বাটার সসে চোবানো ফিশ ম্যনিয়ের অথবা বোরদো সসে গ্রিল করা প্রন।
রয়েছে মশলাদার মেক্সিকান ডিশ অ্যারোজ রাইস, যাতে মেক্সিকান সস সহযোগে ভাত ও চিকেনের সঙ্গে থাকে আমেরিকান কর্ন ও কিডনি বিন্স। রয়েছে আমেরিকান পদ প্যান সিয়ার্ড ফিশ, ফ্রায়েড চিকেন মেরিল্যান্ড এবং রাশিয়ান চিকেন স্ট্রোগানফ।
এ তো গেল কন্টিনেন্টালের গল্প। কিন্তু যাঁদের রসনা ভাত-ডাল-মাছের ঝোলের বাইরে একটু অন্য স্বাদ বলতে বোঝে চিরকেলে চেনা চিনে খাদ্য, বঞ্চিত হবেন না তাঁরাও। চিনা খানা, বা আরও ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে ওরিয়েন্টাল ক্যুইজিন। আর সেই তালিকায় চাউমিন আর রাইসের বিবিধ চিনা অনুষঙ্গের সঙ্গে রয়েছে মে-ফান। চিলি চিকেন ছাড়াও রয়েছে হট গারলিক, হুনান, অয়েস্টার, মাঞ্চুরিয়ান, সিজ্যুয়ান ইত্যাদি নানা স্বাদের সস সহযোগে বানানো মাছ, চিংড়ি এবং মুরগির হরেক পদ।
হোক্ না ভিনদেশি পেটপুজো। তবে রেস্তোরাঁটা যখন এ শহরের, তাতে একটু বাংলার ছোঁয়া থাকবে না তা কি হয়? তাই তো মেনু লিস্টে হরেক পদের প্রকারভেদে বাঙালি নাম দেওয়া হয়েছে নানা রকম। যেমন ‘আহা কি আনন্দ চুমুকে চুমুকে’, ‘ব্রাউন সাহেবের রুটি’, ‘স্যুপ-এ স্যুপ-এ শিহরণ’, ‘ভাজার রাজা দিল বর’, অথবা ‘ভাতের আমি ভাতের তুমি’ এবং ‘অবাক জলপান’। আর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু শ্রবণসুখের জন্য আবহে থাকবে পুরনো দিনের বাংলা ও ইংরেজি গান। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশের খানাপিনার এ এক বাঙালি উদ্যাপন।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.