বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক, রক পাইথন, ধনেশের মতো চেনা-অচেনা হরেক পশুপাখির ‘সংসার’ ওই জঙ্গলে। শ’তিনেক বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সেই অরণ্যে রয়েছে ৮২ লক্ষ গাছগাছালিওযে সবের অনেকগুলিই বিরল প্রজাতির।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে মণিপুর-মিজোরামে ছড়িয়ে থাকা ওই জঙ্গলই কেটে ফেলার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। সেখানে তৈরি হবে টিপাইমুখ বাঁধ। সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই আলোচনায় বসতে চলেছেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকের কর্তারা।
টিপাইমুখ প্রকল্প বিরোধী ‘অ্যাকশন কমিটি’র সদস্যদের বক্তব্য, ওই অরণ্য নষ্ট করা হলে গোটা মণিপুরে তার প্রভাব পড়বে। দেশের অন্য জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে সাধারণভাবে যতটা সবুজ ধ্বংস করতে হয়, টিপাইমুখের জন্য তার চেয়ে অন্তত একশোগুণ বেশি অরণ্য কাটতে হবে। তা ছাড়া, ওই জঙ্গলে বাঘ, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, উল্লুক, স্লো লরিস, পিগ টেল্ড ম্যাকাক, ভালুক, মালয় ভালুক, প্যাঙ্গোলিন, রক পাইথন, হিমালয়ান হলদে গলার মারটেন, ঘড়িয়াল, ধনেশ, কালো চিতাবাঘ-সহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রাণী থাকে। রয়েছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদও। বাঁধ তৈরির জন্য সে সবের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে। ওই জঙ্গলের বাঁশের উপর এলাকার অনেক বাসিন্দা নির্ভরশীল। বিঘ্নিত হবে তাঁদের জীবনযাত্রাও। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, মণিপুরেই প্রায় ৮২ লক্ষ গাছ কাটা হতে চলেছে। মিজোরামে ধ্বংস হবে ১৫৫২ হেক্টর বনভূমি।
টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেও টানাপোড়েন চলছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরিতে সক্ষম ওই প্রকল্প নিয়ে ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রস্তাব গৃহীত হয়। খরচ ধরা হয় ৯২১১ কোটি টাকা। অনেক টালবাহানা, প্রতিবাদের পর ২০০৮ সালে পরিবেশ মন্ত্রক বরাক ও তুইভাই নদীর ওপর ওই প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেয়। ২০১১ সালে মণিপুর সরকারের সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে কেন্দ্র। |