বহু নেতা জড়িয়ে মামলায়, প্রচারে জোর নেই সিপিএমে
শোক কোলে। সাকিনআরামবাগের মধুরপুর। স্থানীয় হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে ওই সিপিএম কর্মীকে আরামবাগ থানায় মাস দুয়েক ধরে ১৪ দিন অন্তর হাজিরা দিতে হচ্ছে। স্কুলেও যাচ্ছেন না।
উত্তম সামন্ত হরিণখোলা-২ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। সিপিএমের হরিণখোলা লোকাল কমিটির সদস্য। একই অভিযোগে তাঁকেও ১৪ দিন অন্তর থানায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। ওই পঞ্চায়েতেরই নারায়ণ হাজরা সিপিএমের আরামবাগ-২ লোকাল কমিটির সদস্য। তাঁরও একই অবস্থা। তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ।
পঞ্চায়েত ভোটে এ বার আরামবাগে সিপিএমের প্রচারে সেই তেজটাই দেখা গেল না। দলের মিছিলে, সভা-সমাবেশে ছিলেন না সিপিএমের অনেক নেতানেত্রীকেই। কলকাতার কাছাকাছি যে লোকসভা আসনে সিপিএম এখনও টিকে আছে, সেটা আরামবাগ। অথচ, সেই আরামবাগেই সিপিএমের প্রচার এত কম কেন? কারণ, নানা মামলায় নাস্তানাবুদ সিপিএম নেতারা। করাও বিরুদ্ধে উঠেছে বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগ, কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হানাহানি, কারও বিরুদ্ধে আবার আলু কেলেঙ্কারি। অভিযুক্ত সিপিএম নেতাদের নামের তালিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। অনেক কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। উত্তম সামন্ত, তিলক ঘোষদের মতো নেতাদের কেউ কেউ আবার গ্রামে ফিরতে না পেরে আরামবাগ শহরে বাড়িভাড়া করে বসবাস করছেন। আর এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূলকেই দুষছেন তাঁরা। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের মিথ্যা মামলার জন্যই এ বার এই হাল। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
ভরসা থাকুক। দু’কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী
এল আরামবাগে। শুক্রবার মোহন দাসের তোলা ছবি।
আইসি সুকোমল দাস বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারি অফিসারেরা অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে মাত্র।”
বর্তমানে আরামবাগের মোট ন’জন সিপিএম নেতা নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন থানায়। আদালতের শর্তে তাঁদের এলাকা ছাড়া মানা। দলের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, সমীর চক্রবর্তীর মতো প্রবীণ সিপিএম নেতারা অন্তরালে চলে গিয়েছেন। অস্ত্র আইন-সহ নানা মামলা রয়েছে তাঁদের মাথায়। আরামবাগ থানার পুলিশ মুখিয়ে আছে তাঁদের গ্রেফতারের জন্য। অনেক নেতাক-কর্মী আবার আইনি কারণে মহকুমায় ঢুকতেও পারছেন না। যেমন, আরান্ডি পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান শেখ আজিজ।
গোটা এলাকা ছয়লাপ শাসক দলেরই পোস্টার-ব্যানারে। যুদ্ধজয় অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁরা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করছেন। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা মনে করছেন, এক সময়ে বামেরা এখানে যে কায়দায় বিরোধীদের স্বর স্তব্ধ করে রাখত, এ বার এখানে সেটাই করেছে তৃণমূল।
অস্ত্র রাখার অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি কিছু দিন পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছিল সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটি অফিস। পরে দলের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খোলা হয়। সিপিএমের আরামবাগ-২ লোকাল কমিটির সদস্য নারায়ণ হাজরা বলেন, “মা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন। তখন আমি জেলে। শেষ দেখাটাই দেখতে পেলাম না। এখন গ্রামে ফিরতে পারছি না।” আরামবাগের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিনয় দত্ত বলেন, “শাসক দলের নির্দেশে পুলিশ মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে আমাদের। আমি দীর্ঘদিন হাজতবাসের পরে সবে ছাড়া পেয়েছি। আমরা দমবার পাত্র নই। আমরা চাইছি, আরামবাগে আধাসেনা নামুক। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিক।” তৃণমূল অবশ্য এতে রাজনীতি দেখছে না। দলের নেতা সমীর ভাণ্ডারী বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে আমাদের কী করার আছে? আমরা কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাইনি। আসলে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে বলেই প্রচারে জোর নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.