প্রেসিডেন্সির জেনারেল পত্রের পঠনপাঠন যে অন্যান্য রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে কিছুটা অন্য ধাঁচের হবে, কর্তৃপক্ষ আগেই তা জানিয়েছেন। তবে শুধু পঠনপাঠন নয়, ওই পত্রগুলির মূল্যায়নও হবে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে। জেনারেল এডুকেশন, সংক্ষেপে ‘জেন এড’ নামে পরিচিত ওই সব পত্রের মূল্যায়নের অনেকটাই নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের উপরে। কর্তৃপক্ষের মতে, ওই সব পত্রের পাঠ্যক্রম এবং বিষয়বস্তু কিছুটা ব্যতিক্রমী। তাই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যায়ন পদ্ধতিও কিছুটা অন্য রকম করা হচ্ছে। জেনারেল পত্রের ব্যাপারে পড়ুয়াদের উদাসীনতা কাটিয়ে আগ্রহ বাড়াতেই এই ব্যবস্থা চালু করছে প্রেসিডেন্সি।
অনার্স (প্রেসিডেন্সি যাকে বলছে ‘মেজর’) পত্রের সঙ্গে ‘পাশ’ হিসেবে যে-সব বিষয় পড়তে হয়, সেগুলোরই আধুনিক নাম জেনারেল বা ‘জেন এড’। এ বছর থেকে প্রেসিডেন্সির ‘জেন এড’ পত্রগুলিকে ঢেলে সাজা হয়েছে। সেই জন্য বদলেছে মূল্যায়নের ধরনও। ইতিহাস, অঙ্ক, ভূগোলের মতো চিরাচরিত বিষয়ের জায়গায় পত্রগুলি তৈরি হয়েছে একটু অন্য ভাবে। তার মধ্যে কয়েকটি হল দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান, প্রেমের সমাজতত্ত্ব, ডিজিটাল হিউম্যানিটিজ, দার্শনিক মনস্তত্ত্ব, মানবজীবনে পোকামাকড়ের ভূমিকা ইত্যাদি। শুক্রবার কাউন্সেলিং করে বিভিন্ন জেন এড পাঠ্যক্রমে ছাত্র ভর্তি হয়েছে প্রেসিডেন্সিতে। তিন বছরে ছ’টি সেমেস্টারের মধ্যে প্রথম চারটিতে জেন এড পত্র পড়তে হবে। বিজ্ঞানের বিষয়ে মেজর (অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাকে বলা হয় অনার্স) পড়লে অন্তত দু’টি কলা শাখার জেন এড পত্র এবং কলা শাখার কোনও বিষয়ে মেজর পড়লে অন্তত দু’টি বিজ্ঞানের জেন এড পত্র পড়া বাধ্যতামূলক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, এই পত্রগুলির মূল্যায়ন হবে দু’ভাগে। সেমেস্টারের শেষে চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং সেমেস্টার পরীক্ষার মোট নম্বর কী পদ্ধতিতে ভাগাভাগি হবে, তা ঠিক করবেন সংশ্লিষ্ট পত্রের শিক্ষকেরা। মোট ৫০ নম্বরের পত্রে ২০, ২৫ বা ৩০ নম্বর অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য নির্দিষ্ট রাখা হতে পারে। অভ্যন্তরীণ ও সেমেস্টারের পরীক্ষায় কোন জেন এড পত্রের মোট নম্বর কী ভাবে ভাগাভাগি করা হবে, সেমেস্টারের শুরুতেই পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরকে তা জানিয়ে দিতে হবে। ধারাবাহিক-নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন বা প্রজেক্ট, কোন পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন হবে, তা-ও ঠিক করবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
জেনারেল পত্রের মূল্যায়নে এমন ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা কেন?
উপাচার্য মালবিকা সরকার বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত জেনারেল পত্র পড়ে দায়সারা ভাবে। কিন্তু প্রেসিডেন্সিতে জেন এড পত্রগুলির পঠনপাঠনেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যক্রমের প্রতি আগ্রহী করে তুলে জেন এড পত্রের পঠনপাঠনে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্যই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকটা স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে।”
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন, যাদবপুরে জেনারেল পত্রের মূল্যায়নে ২০ নম্বর থাকে অভ্যন্তরীণে, ৩০ নম্বর থাকে সেমেস্টারের পরীক্ষায়। আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমেস্টারের পরীক্ষায় ২০ শতাংশ নম্বর থাকে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে।
|