ফের বিপদসঙ্কেত। অর্থনীতির ওপর থেকে কালো পর্দা যে এখনও সরেনি, শুক্রবার তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল সরকারি পরিসংখ্যান।
এ দিন প্রকাশিত পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শিল্পোৎপাদন ও রফতানি সঙ্কুচিত, গাড়ি বিক্রি এখনও তলানিতে, খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। কালো মেঘের আড়ালে রুপোলি রেখা অবশ্য সোনা-রুপো আমদানি কমার জেরে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বশে আসা। পাশাপাশি, এই প্রথম আর্থিক পরিসংখ্যান শেয়ার বাজার বন্ধের পরে প্রকাশ করেছে কেন্দ্র, যাতে বাজারে তার কোনও তাৎক্ষণিক প্রভাব না-পড়ে। দাওয়াইয়ে ফলও মিলেছে। পরিসংখ্যানের প্রভাব এ দিন এড়াতে পেরেছে শেয়ার বাজার ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। বরং ইনফোসিসের ফল বাজারের প্রত্যাশা পূরণ করায় তার হাত ধরে সেনসেক্স এ দিন বেড়েছে ২৮২ পয়েন্ট। চাঙ্গা বাজারই আবার ডলারে টাকার দাম বাড়ায় ইন্ধন জুগিয়েছে। টাকা ১১ পয়সা বাড়ায় দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৯.৫৬ টাকা। যা গত দু’সপ্তাহে টাকার সর্বোচ্চ দর।
নারায়ণমূর্তি নতুন করে সংস্থার হাল ধরার পর ইনফোসিসের নিট মুনাফা চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে ৩.৭% বেড়ে পৌঁছেছে ২৩৭৪ কোটি টাকায়। টাকার দাম পড়ায় রফতানি থেকে ভাল মুনাফা এসেছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর। ডলারে আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস অর্থবর্ষের জন্য ৬-১০ শতাংশেই বহাল রেখেছে সংস্থা। ইনফোসিসের ফলাফলে মোটামুটি সন্তুষ্ট বাজার। ফলে তার শেয়ার দর শুক্রবার বেড়েছে ১১%।
তবে শেয়ার ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অর্থনীতির ঘোরালো চিত্রের প্রভাব সোমবার পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন অবশ্য আশ্বাসের সুরে বলেন, গত ছ’-সাত মাসে সরকার অর্থনীতির হাল ফেরাতে যে-সব পদক্ষেপ করেছে, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ভাগে। |
শিল্পমহলের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ, গত ১১ মাসের মধ্যে মে মাসেই সবচেয়ে নীচে নামল শিল্পোৎপাদন। বাড়া তো দূরের কথা, সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী তা সরাসরি কমেছে ১.৬%। এপ্রিলে তা বেড়েছিল ১.৯% এবং গত বছর মে মাসে ২.৫%। মূলত কারখানায় তৈরি পণ্যের উৎপাদন ২% কমা (গত বছরের বৃদ্ধি ২.৬%) এবং খনি ক্ষেত্রে উৎপাদন ৫.৭% কমার (গত বছর তা কমেছিল ০.৭%) জেরেই শিল্প বৃদ্ধি এতটা তলানিতে নেমেছে। গাড়ি শিল্পে তলানিতে নেমে আসা চাহিদাও কারখানার উৎপাদন কমাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। শিল্প বৃদ্ধির হার নির্ণয়ে কারখানার পণ্যের গুরুত্বই ৭৬%। পাশাপাশি, মূলধনী পণ্য উৎপাদনও কমেছে ২.৭%, যা লগ্নি কমার অশনি সঙ্কেত, মনে করছে শিল্পমহল।
এ দিকে, খাদ্যপণ্যের চড়া দামের কারণেই তিন মাস কমার পর জুনের হিসেবে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ছুঁয়েছে ৯.৮৭%। মে মাসে তা ছিল ৯.৩১%। তার মধ্যে আবার খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ১১.৮৪%, মে মাসে যা ছিল ১০.৬৫%। জুনে শুধু শাক-সব্জির দামই বেড়েছে ১৪.৫৫%। উল্লেখ্য, এই খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধিকে ভিত্তি করেই ঋণনীতি স্থির করে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শিল্পমহলের মত, তাই শীর্ষ ব্যাঙ্ক এ মাসের শেষে তার ঋণনীতিতে ঋণে সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না। ফলে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির পথে বাধা কাটবে না বলেই তাদের আশঙ্কা।
বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমায় অবশ্য আশান্বিত শিল্পমহল। বিশেষত, জুনে রফতানি ৪.৫৬% কমা সত্ত্বেও এই ঘাটতি কমে ১২২৪ কোটি ডলার হয়েছে। মে-তে তা ছিল ২০১৪ কোটি। শুল্ক বাড়ায় সোনা-রুপো আমদানি জুনে ২২.৮% কমেছে বলে জানান বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ডিরেক্টর জেনারেল অনুপ পূজারী।
|