সেই বেন বার্নানকেই আপাতত স্বস্তি দিলেন মনমোহন-চিদম্বরমকে। এ বার তিনি ঘোষণা করেছেন, মার্কিন অর্থনীতি এখনও সে ভাবে চাঙ্গা হয়নি। কাজেই পুরনো ঋণ-সহায়তা প্রকল্প এখনও চালিয়ে যাওয়া দরকার।
তিন সপ্তাহ আগে মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সে দেশের ফেডেরাল ব্যাঙ্কের প্রধান এই বার্নানকে। মার্কিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় তার পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারত থেকে লগ্নি তুলে নিতে শুরু করেন। ফলে ডলারের চাহিদা বেড়ে গিয়ে টাকার দাম হু-হু করে পড়তে শুরু করে।
|
পি চিদম্বরম |
|
বেন বার্নানকে |
আজ বার্নানকের ঘোষণায় টাকার দামেরও যেমন কিছুটা উন্নতি হয়েছে, শেয়ার বাজারেও তার সুফল দেখা গিয়েছে। ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য যেখানে ৬২-র কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, সেখানে আজ দু’দিন ধরে তা ষাটের নীচে দাঁড়িয়ে সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। শেয়ার সূচকও কিছুটা বেড়ে ১৯,৬০০-র উপরে গিয়েছে।
পড়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আজ আমেরিকার মাঠে নেমে পড়েছেন মনমোহন সরকারের দুই মন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং আনন্দ শর্মা। ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ভারতে এসে কারখানা তৈরির জন্য মার্কিন সংস্থাগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কেও একই ডাক দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। দু’জনেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, নয়াদিল্লির নীতি এখনও আর্থিক বৃদ্ধির সহায়ক। সেখানে সকলের জন্যই সমান সুযোগ রয়েছে।
কিছু দিন আগে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির কাছে মনমোহন-সরকারের নীতি এবং ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন শিল্পপতিরা। সেই উদ্বেগই আজ দূর করার চেষ্টা করেছেন চিদম্বরম ও আনন্দ শর্মা। যার পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হল, বিদেশি লগ্নি নিয়ে চলতি খাতে লেনদেনের ঘাটতি বা বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা। পাশাপাশি ভারতে আরও বিদেশি লগ্নি নিয়ে এসে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। চিদম্বরম-শর্মা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, খুব শীঘ্রই বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হচ্ছে। মার্কিন সংস্থাগুলি সেই সুযোগ নিতে পারে। তাতে দু’পক্ষেরই লাভ। দুই মন্ত্রীর সঙ্গে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও যোগ দিতে চলেছেন। ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের সভায় ভারতে লগ্নি করা সাড়ে তিনশো সংস্থার শীর্ষকর্তাদের সংশয় দূর করার চেষ্টা করবেন তিন জনে মিলে। কিন্তু তাতে কতটা লাভ হবে, সেই প্রশ্ন থাকছে। কারণ বার্নানকের ঘোষণায় শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলিই চাঙ্গা হয়েছে। এশিয়ার প্রায় সমস্ত বাজারেরই সূচক আজ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বার্নানকে এর আগে ঘোষণা করেছিলেন চলতি বছরের শেষে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া হতে পারে। সহজে ঋণ ও নগদ জোগানের ব্যবস্থা করতে প্রতি মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড কিনছে ফেডেরাল ব্যাঙ্ক। বার্নানকে এখন বলছেন, সেই প্রকল্পের এখনও প্রয়োজন রয়েছে। কারণ আমেরিকার চাকরির বাজার এখনও ভাল নয়। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলিরও স্বাস্থ্য ফিরেছে এমন বলা যায় না। বার্নানকের নতুন ঘোষণা থেকে ভারত কতটা ফায়দা তুলতে পারে, সেটাই এখন দেখার।
|