সিপিএমের চেনা আসনে জিততে মরিয়া তৃণমূল |
নীলোৎপল রায়চোধুরী • জামুড়িয়া |
এক জন দল নিয়েই মরেন-বাঁচেন। অপর জন জমিদার বাড়ির ছেলে, অন্যের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসেন বলে সুনাম রয়েছে।
দলের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া ব্যক্তিত্বই মাথাব্যথা হতে পরে, মনে করছেন এক জনের ঘনিষ্ঠেরা। অন্য জনের কপালে ভাঁজ ফেলেছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, যদিও মুখে স্বীকার করতে নারাজ।
জেলা পরিষদের ৬৯ নম্বর আসনে লড়াই বেশ জমজমাট। জামুড়িয়ার কেন্দা, পরাশিয়া, ডোবরানা, চিঁচুড়িয়া ও শ্যামলা পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে এই আসন। গত বার সেখানে জিতেছিল সিপিএম। এ বার সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন কুন্তল চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন তাপস চক্রবর্তী। আর তাঁদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখে আশায় বুক বাঁধছেন ওই আসনেরই আর এক প্রার্থী, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভক্তিপদ চক্রবর্তী।
তাপসবাবুর বাড়ি জামুড়িয়ার হিজলগড়ায়। সেখানে জমিদারবাড়ির ছেলে হিসেবে বেশ প্রভাব রয়েছে তাপসবাবুর। তবে যে আসনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন তার মধ্যে হিজলগড়া নেই। কেন্দা ও শ্যামলায় তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখল করতে চলেছে। গত বার পরাশিয়া বাদে বাকিগুলিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম। এ বার তৃণমূলের মাথাব্যথা দলের কোন্দল। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। জেলা পরিষদের আসনেও দলের দ্বন্দ্ব বাধ সাধতে পারে, আশঙ্কা তৃণমূলেরই একাংশের।
তাপসবাবু যদিও এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। হিজলগড়ায় তাঁর প্রচুর সম্পত্তি, জমির চাষবাস, পুকুরের মাছ। তিনি ও তাঁর দুই ছেলে মানুষের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাপসবাবু বলছেন, “ভোটে ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ আমাদের দলকে বেছে নেবেন। জয় সম্পর্কে আমি বিন্দুমাত্র চিন্তায় নেই।” তাঁর অভিযোগ, “ডোবরানা পঞ্চায়েত গত পাঁচ বছরে কী করেছে? জল থেকে রাস্তা, কোনও সমস্যারই সমাধান করেনি।”
অবিবাহিত কুন্তলবাবু ডোবরানায় মায়ের সঙ্গে থাকেন। বছর পঁয়ত্রিশের সিপিএমের এই সর্বক্ষণের কর্মী গত বার ডোবরানা পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে প্রধান হন। গোটা পঞ্চায়েতই পান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এলাকায় কুন্তলবাবুর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য এ বার আর পঞ্চায়েত নয়, জেলা পরিষদে তাঁকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। প্রধান থাকাকালীন তাঁর পঞ্চায়েতে বারবার নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। ২০১১ সালের পরে নানা দাবি-দাওয়া আরও বেড়েছিল। কিন্তু কুন্তলবাবু আপোষে যাননি, তাই দলে তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে বলে সিপিএমের একটি সূত্রে খবর। সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে দল থেকে ভাতা পান, প্রধান হিসেবেও ভাতা পেয়েছেন। তাতেই চলেছে দু’জনের সংসার। কুন্তলবাবুর দাবি, “আমাদের এলাকায় গত বার ওরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। এ বার আমরা কিন্তু প্রথমে প্রার্থী দিয়েছিলাম। অনেক জায়গায় জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে ওরা। এখন নিজেরাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফাঁসে জড়িয়ে পড়েছে।” তাপসবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে কুন্তলবাবুর পাল্টা দাবি, “দায়িত্ব পেয়ে পঞ্চায়েতে ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ করেছি। মানুষ সেটা জানেন। যেখানে পঞ্চায়েতে তৃণমূল ভোট দেওয়ার সুযোগ দিল না, জেলা পরিষদে মানুষ তার উপযুক্ত জবাব দেবেন।”
জেলা পরিষদের ওই আসনে সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূল ছাড়াও রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী নারায়ণ পণ্ডিত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ভোট কাটাকাটি কী ভূমিকা নেয়, তার দিকেও তাকিয়ে থাকবেন তাপসবাবু ও কুন্তলবাবুরা। কংগ্রেস প্রার্থী ভক্তিপদবাবুর মন্তব্য, “সিপিএমকে মানুষ ৩৪ বছর দেখেছেন। এই দু’বছরে তৃণমূল তো তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। মানুষ এ বার নিশ্চয়ই ঠিক লোককেই বেছে নেবেন।” |