ভরদুপুরে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে হাত দেখাচ্ছেন এক যুবক। তাঁকে যাত্রী ভেবে চালক ট্যাক্সি দাঁড় করাতেই ঘিরে ধরলেন কয়েক জন। সঙ্গে পুলিশ। হতচকিত চালক অবতার সিংহ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িটি রাস্তার ধারে নিতে নির্দেশ দিলেন ওই যুবক। তার পরেই শুরু হল ট্যাক্সির মিটার পরীক্ষা।
যাত্রী সেজে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবক আদতে পরিবহণ দফতরের অফিসার। পুলিশ বাদে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য লোকেরাও একই দফতরের কর্মী। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এমনই কয়েকটি দল গড়ে ট্যাক্সির মিটার পরীক্ষা করার অভিযান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশপ্রিয় পার্ক, গড়িয়াহাট, কাঁকুড়গাছি-সহ শহরের নানা প্রান্তে এমন অভিযান চলেছে। পরিবহণ দফতরের এক অফিসার জানান, মিটার ঠিক মতো কাজ করছে কি না বা প্রিন্টার থেকে বিল বেরোচ্ছে কি না, সেটাই এ দিন দেখা হয়েছে। অনেক ট্যাক্সির ক্ষেত্রেই মিটারে গরমিল খুঁজে পেয়েছেন পরিবহণ দফতরের অফিসারেরা। যেমন হয়েছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে অবতার সিংহের ক্ষেত্রে।
অবতারকে ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে মিটার পরীক্ষা করতেই অফিসারেরা দেখলেন, ওই ট্যাক্সিতে মিটার ঠিক মতো চলছে না। প্রিন্টারও গোলমেলে। বারবার সুইচ টিপলেও অবতারের ট্যাক্সির প্রিন্টার থেকে এক বারও বিল ছেপে বেরোয়নি। এর পরেই ওই চালকের লাইসেন্স-সহ গাড়ির কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেন অফিসারেরা। পরিবহণ দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, সারা দিনে এমন ২০টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত গাড়িগুলির বিরুদ্ধে ন্যূনতম তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে। এ দিন কাগজপত্র ঠিক না থাকার জন্য ছ’টি ট্যাক্সিকে পাকড়াও করা হয়েছে। |
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, মিটারে গোলমাল থাকলে তা সারানোর জন্য ট্যাক্সিগুলিকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। ট্যাক্সিতে নতুন মিটার লাগিয়ে পরিবহণ দফতরের অফিসে তা পরীক্ষা করাতে হবে। সেই পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই জরিমানার টাকা জমা নেওয়া এবং কাগজপত্র ফেরত দেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে মিটার ঠিক না করালে সেই ট্যাক্সির পারমিট বাতিল হতে পারে বলেও পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।
মিটারে গোলমালের কারণ যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা। তবে এ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকেরাও অনেকাংশে দায়ী বলে চালকদের মতামত। তাঁরা বলছেন, গাড়ির মিটার বা প্রিন্টার ঠিক করা মালিকের দায়িত্ব। চালকেরা মিটার সারাতে বললেও মালিকেরা তা শুনতে চান না। অবতার সিংহ বলেন, “দু’মাস আগে প্রিন্টার থেকে বিল বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মালিককে সারাতে বললেও তিনি শোনেননি।”
কিন্তু কেন এই অভিযান? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ট্যাক্সির মিটার নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ মিলছে। বিশেষত, রাতের ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সংখ্যা বেশি। সেই কারণেই এই অভিযান শুরু। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সাধারণ যাত্রীরা নানা ভাবে নাকাল হচ্ছেন। মিটারে কারচুপি বন্ধ করতেই হবে।” পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, সপ্তাহে তিন-চার দিন এমন অভিযান হবে। এমনকী, রাতেও অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
|