যত গোলমাল একখানা ঘরের অন্দরে। ভবানীপুরের চৌধুরী এস্টেট-এর একটি ঘর নিয়ে টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছেন স্বামী-স্ত্রী। বিষয়টির জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত।
মামলার শুনানির সময়ে সব শুনে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “স্বামী-স্ত্রীকে ওই ঘরে ঢুকিয়ে আলোচনার জন্য তালাবন্ধ করে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে!” ওই ঘর নিয়ে পারিবারিক বিসম্বাদ মেটাতে গিয়ে অবশ্য আগেই অতিষ্ঠ হয়েছে স্থানীয় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশমাফিক ওই ঘর বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। কিন্তু তাতে ওই দম্পতির (নীলাঞ্জন চৌধুরী ও সুদক্ষিণা চৌধুরী) সমস্যা মেটেনি। বরং পুলিশের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন গৃহকর্তা তথা নীলাঞ্জনের বাবা
চন্দ্রনাথ চৌধুরী।
বিচারপতি সঞ্জীববাবুর পর্যবেক্ষণ, “এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী বসে কথা বললেই বিষয়টির নিষ্পত্তি ঢের সহজ হয়ে যাবে। অনেক ভুল ভেঙে যাবে।” কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে কই? সুদক্ষিণার আইনজীবী শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর মক্কেলের সঙ্গে ওঁর স্বামীর দেখাই হচ্ছে না দীর্ঘদিন। নীলাঞ্জনের তরফে সুদক্ষিণার সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলাও করা হয়েছে। হাইকোর্টে বিচারপতি সঞ্জীববাবু অবশ্য বলেছেন, “বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা হতে পারবে না এমন কোনও নিয়ম নেই।” নীলাঞ্জন কবে সুদক্ষিণার সঙ্গে কথা বলবেন, তা আগামী মঙ্গলবার চন্দ্রনাথবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ীকে আদালতে জানাতে বলেছেন বিচারপতি।
২০০৪ সালে বিয়ে হয় সুদক্ষিণা-নীলাঞ্জনের। কোনও সন্তান নেই। শুভায়ুবাবু জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে বৌমাকে কিচ্ছু বুঝতে না-দিয়ে চন্দ্রনাথবাবু, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে টালিগঞ্জে অন্য ঠিকানায় চলে যান। চন্দ্রনাথবাবুর বৃদ্ধা মা ও বৌমা সুদক্ষিণা ওই বাড়িতে পড়ে থাকেন। বৃদ্ধার দেখভালের দায়িত্ব থাকে সুদক্ষিণার উপরে। একই সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলাও করা হয়। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সুদক্ষিণার বিরোধ তীব্র হয় সম্প্রতি ওই বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে। পুলিশ সূত্রের খবর, একটি ঘরের আলমারিতে রাখা কিছু জিনিসের অধিকার দাবি করেই দু’পক্ষের বিরোধ। চন্দ্রনাথবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্যবাবুর বক্তব্য, “বিষয়টি মেটাতে পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে।” সুদক্ষিণার আইনজীবীর বক্তব্য, “বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে আমার মক্কেলও (সুদক্ষিণা) অহেতুক জটিলতা চান না। কিন্তু তিনি শুধু একবার তাঁর স্বামীর (নীলাঞ্জন) সঙ্গে কথা বলতে চান।” |