একই রাস্তা। বিভিন্ন ট্যাক্সি। আর তাতেই রোজ ভাড়ার হেরফের ঘটে চলেছে মিটারে। এই অবস্থাটা পাল্টানোর দাওয়াই হিসেবে ট্যাক্সিতে প্রিন্টার ও ডিজিটাল মিটার বসানোর দাবি উঠেছে দীর্ঘদিন। জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে হাইকোর্টে। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসছে রাজ্য সরকার। এবং তা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে।
প্রিন্টার ও ডিজিটাল মিটার-বিহীন ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতে আগামী সোমবার থেকে অভিযান শুরু করবে রাজ্য পরিবহণ দফতর। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র তা জানিয়েও দিয়েছেন। তবে সরকারি অভিযান শুরু হলেও সমস্যা এখনই কত দূর মিটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
শহরের ট্যাক্সি-আরোহীদের রোজকার অভিজ্ঞতা বলছে, ডিজিটাল মিটার বসানো থাকলেও বেশির ভাগ ট্যাক্সিতেই প্রিন্টারের বালাই নেই। ফলে, ট্যাক্সি-ভাড়ার নথি মেলে না। ট্যাক্সির প্রিন্টার থেকে বেরোনো রসিদে ট্যাক্সির নম্বর, কত কিলোমিটার যাতায়াত করা হয়েছে, মিটারে কত টাকা দেখানো হচ্ছে, কত টাকা উঠেছে থেকে শুরু করে ট্যাক্সির মালিকের মোবাইল নম্বর বা কোনও ‘হেল্পলাইন’-এর নম্বর থাকার কথা। যাতে ট্যাক্সি-ভাড়ায় গরমিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয় যাত্রীদের। বাস্তবে এই ‘রসিদ’ মেলাই দূর অস্ৎ কলকাতায়। পরিবহণ দফতর ট্যাক্সি-অভিযান শুরু করলেও এই সমস্যার কবে সুরাহা হবে, তার নিশ্চয়তা মেলেনি। |
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দেয়, সব ট্যাক্সিকেই এক দিনের মধ্যে নতুন মিটারের জন্য আবেদনের কাজ সেরে রাখতে হবে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই ছ’মাসের মধ্যে রাজ্যের সব ট্যাক্সিতে নতুন মিটার লাগাতে হবে বলে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ওই সময়সীমা এক দিনও বাড়ানো যাবে না। ফলে, মিটার বদলের প্রক্রিয়ায় রাজ্যকেও তৎপর হতে হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টেরই এক প্রবীণ আইনজীবী প্রদীপ কুমার কলকাতা হাইকোর্টে ট্যাক্সি-মিটার বদলের আর্জি জানিয়ে একটি জনস্বার্থের মামলা করেন। তিনি জানান, বাড়ি থেকে হাইকোর্টে আসা-যাওয়ার সময়ে একই পথে রোজ ভাড়ার ফারাক হচ্ছে। অথচ, কিছু বলতে গেলেই ট্যাক্সিচালকেরা দুর্ব্যবহার করেন। ডিজিটাল প্রিন্টার-সহ মিটার বসানো হলে এই হয়রানি মিটবে। সেই মামলাতেই হাইকোর্ট মিটার বদলের নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।
হাইকোর্টে রাজ্যের তরফে রিপোর্টে এ দিন বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা ২০১২ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সব ট্যাক্সিকে পুরনো মিটার বদলে কম্পিউটারাইজড থার্মাল প্রিন্টার মিটার বসাতে বলে। তাতে ৭০৩৯টি মিটার বদলের আবেদন জমা পড়ে। ইতিমধ্যে ৩২৩৪টি মিটার বদল করা হয়েছে। বাকিগুলি বদলের কাজ চলছে। ট্যাক্সি-মালিকদের দু’টি সংগঠন আরও কিছুটা সময় চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। ক্যালকাটা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে আইনজীবী ভাস্কর নন্দী আবেদন জানিয়ে বলেন, একটি মিটার বদল মানে ১০ হাজার টাকার ধাক্কা। তাই আরও সময় দরকার। ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা বিমল গুহের দাবি, “পরিবহণ দফতর ও মিটার প্রস্তুতকারকদের পক্ষেও একসঙ্গে এত মিটার সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।”
তিন সপ্তাহ পরে মামলাটির ফের শুনানি হবে। সে দিন রাজ্যকে জানাতে হবে, কত নতুন মিটার লাগানো হয়েছে, খারিজ করা হয়েছে কত পারমিট। রাজ্য সরকারের হিসেবে, রাজ্যে কম-বেশি ৩৩ হাজার ট্যাক্সির পারমিট রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার ট্যাক্সি নতুন মিটারের জন্য আবেদনটুকুও করেনি। শনিবারের মধ্যে এই সমস্ত ট্যাক্সির আবেদন জমা না-পড়লে তাদের পারমিট খারিজের অভিযান শুরু হবে। ট্যাক্সি-মালিকেরা অবশ্য দাবি করেছেন, এক দিনের মধ্যে নতুন মিটারের জন্য আবেদন করতে বলা হলেও নতুন মিটার লাগানোর কাজ শেষ করার জন্য হাইকোর্ট ছ’সপ্তাহ সময় দিয়েছে। |