ঘুমের মধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এসি মেশিনে আগুন লাগার ফলে ঘরের ভিতরে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ধোঁয়াতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ওই পরিবারের আরও তিন জন। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলা লেনের এক বহুতলে।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ব্রিজিত চট্টোপাধ্যায় (৫০)। এই ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ব্রিজিতবাবুর স্ত্রী সোনালি চট্টোপাধ্যায়, মেয়ে সরমা চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁদের এক আত্মীয় রানা রায়।
দমকল জানায়, এ দিন ভোর চারটে নাগাদ আগুন লাগার খবর মেলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দমকল ওই ফ্ল্যাট থেকে সকলকে বার করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ব্রিজিতবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকল জানিয়েছে, শর্ট সার্কিটের ফলে ঘরের এসি মেশিনে আগুন লেগে গিয়েছিল। |
আবাসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্রিজিতবাবুরা দীর্ঘদিন ধরে ওই বহুতলের চারতলায় রয়েছেন। বাড়ির অন্যান্য তলায় তাঁর আত্মীয়েরাও থাকেন। ব্রিজিতবাবুর ভাই সুজিত চট্টোপাধ্যায় জানান, আগুন লাগার বিষয়টি বহুতলের অন্য বাসিন্দারাও টের পাননি। এক প্রতিবেশী ভোরবেলা এসি মেশিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। তিনিই দমকলে খবর দেন।
দমকল সূত্রের খবর, ইদানীং ‘উইন্ডো’ এসি মেশিনেই আগুন লাগার খবর বেশি মিলছে। গত ২১ মার্চ এসএসকেএম হাসপাতালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সে দিন সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের আউটডোরে আগুন লেগেছিল। আতঙ্কে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ‘নিউ ক্যাজুয়ালটি ব্লক’-এর রোগীদের বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, ‘উইন্ডো’ এসি-র ক্ষেত্রেই কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে?
ব্রিজিত চট্টোপাধ্যায়। |
বিশেষজ্ঞেরা জানান, ‘উইন্ডো’ এসির সঙ্গেই কম্প্রেসর লাগানো থাকে। যার ফলে শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে কার্বন মোনোক্সাইড গ্যাস বেরোনোর আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কার্বন মোনোক্সাইড বন্ধ ঘরে ছড়িয়ে পড়লে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা খুবই বেশি থাকে। স্প্লিট এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসরটি মূল এসি থেকে দূরে থাকার ফলে এই ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা কম বলে তাঁদের দাবি। এর পাশাপাশি, মানুষের গাফিলতিকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, অনেক সময়েই এসি বসানোর পরে আর ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ভিতরের ছোটখাটো ত্রুটিও মেরামত করা হয় না। যার থেকে পরে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে।
দমকল সূত্রের খবর, অগ্নিকাণ্ডের পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সেই বাড়ির মিটার এবং ওয়্যারিংয়ের ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। বিশেষ করে পুরনো মিটার এবং কম ক্ষমতাসম্পন্ন তারের জন্য শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। এসএসকেএম হাসপাতালের আগুনের ক্ষেত্রেও ‘উইন্ডো’ এসি এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে একই অভিযোগ উঠেছিল। এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে দমকল।
|
সতর্ক থাকুন |
• বছরে তিন বার এসি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করান।
• এসি বসালে পুরনো মিটার বদলে নতুন মিটার ব্যবহার করুন।
• এসি-র ওয়্যারিংয়ে ৪ বর্গ মিলিমিটার পুরু তার ব্যবহার করুন।
• ঘুমোনোর সময়ে এসি ‘স্লিপ মোড’-এ চালান।
• তাপমাত্রা ২২-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রাখুন। |
|