দশের চক্করে ভগবান-ও নাকি ভূত হন! আর দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোর সম্প্রসারণকে থমকে রেখেছে মাত্র একের চক্কর।
মেট্রোকর্তারা বলছেন, মাত্র এক কিলোমিটার লম্বা একটি জমির সমস্যা নিয়েই প্রকল্প প্রায় থমকে গিয়েছে। ওই এলাকা হাতে এলেই মেট্রো দৌড়বে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও দখল হয়ে যাওয়া ওই জমি উদ্ধার করতে পারছে না রেল।
মেট্রো সূত্রের খবর, দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা রেললাইন বসানোর প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু নোয়াপাড়া থেকে বরাহনগরের মধ্যে এক কিলোমিটার লম্বা একটি এলাকা জুড়ে রয়েছে দখলদারদের কলোনি। এক রেলকর্তার কথায়, “ওই এলাকায় অন্তত ৫০০ পরিবার বসবাস করে। তাদের একটু সরিয়ে দিতে পারলেই রেললাইন পাতা যাবে। কিন্তু সেই কাজটাই করা যাচ্ছে না।” কেন?
রেলকর্তাদের দাবি, উচ্ছেদ করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সে কাজ সরকার করছে না। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে রাজ্যের সহযোগিতা চাইছি। এর জেরে মেট্রোর কাজের গতি থমকে গিয়েছে।” মহাকরণ সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারও ভাবনাচিন্তা করছে। আগামী ১৭ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মহাকরণে মেট্রোর জমি উদ্ধার নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। মেট্রোর অন্য প্রকল্পের পাশাপাশি নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বরের জট নিয়েও সেখানে কথা হবে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। |
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পটি ২০০৯-২০১০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেল বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রকল্পটি আসলে দেখানো হয়েছিল, ‘দমদম-গড়িয়া মেটেরিয়াল এক্সটেনশন’ হিসেবে। কোনও প্রকল্পের ‘মেটেরিয়াল এক্সটেনশন’ করা হলে তার জন্য যোজনা কমিশনের ছাড়পত্র লাগে না। রেলকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রকল্পটি তড়িঘড়ি বাজেটে আনার জন্যই এটিকে আগের মেট্রো রুটের ‘মেটেরিয়াল এক্সটেনশন’ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। রেল সূত্রের খবর, ২০০৯-’১০ সালে এই প্রকল্পের খরচ হিসেবে ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু জমি-সহ অন্যান্য নানা বাধায় কাজ আটকে যাওয়ায় খরচ বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ২২৯৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ইতিমধ্যে দমদম থেকে নোয়াপাড়া ও দমদম থেকে বিমানবন্দরের দিকে এক কিলোমিটার করে নতুন লাইন ও নোয়াপাড়া স্টেশন তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮২ কোটি টাকা।
জমি-সমস্যার সঙ্গে আরও একটি বাধা আছে এই প্রকল্পে। মেট্রোকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যখন নকশা হয়েছিল সেই সময়ে এই জবরদখলের জায়গা নিয়ে কী করা উচিত, তা ভাবা হয়নি। ভাবা হয়নি দমদম স্টেশনের কাছে সিসিআর ব্রিজ এবং বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কথাও। তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি বিটি রোডের ডানলপ ব্রিজ নিয়েও। ফলে ওই বিষয়গুলি এখন জটিলতা তৈরি করছে।
রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের বক্তব্য, “দখলদার সরিয়ে কোনও কিছু করতে গেলে সমীক্ষার সময়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি ভাবা উচিত। না হলে পরে এই সব সমস্যা তৈরি হয়।” সমীক্ষাতেও পুনর্বাসনের উল্লেখ থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। যদিও মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় প্রায় ৫০০ মিটার কাজ হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। এখন সমস্যা ওই এক কিলোমিটার জমি।”
জমি পেলেও অনেকটাই নির্ভর করছে অর্থ বরাদ্দের উপরে। এমনিতেই রেলের কোষাগারে টান পড়েছে। তার উপরে পরিকাঠামো ঠিক না-করে পরপর নতুন লাইনে কী ভাবে মেট্রো চলবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভাড়া না বাড়িয়ে কী করে ওই সব প্রকল্প সফল করা সম্ভব, সেটাই দেখার।
|