বিশ্ববিদ্যালয় পাড়াতেও মিছিল চায় না লালবাজার
মেট্রো চ্যানেলে সভা-সমাবেশ কিছু দিন আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। এ বার ধর্মতলা-বি বা দী বাগ চত্বর থেকে শুরু করে কলেজ স্কোয়ার ও যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেও মিটিং-মিছিল বন্ধ করতে চায় লালবাজার। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে প্রস্তাবাকারে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
২০০৩ সালে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত মহানগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় আদালত গত বছর তাঁর মতামত জানতে চায়। সুভাষবাবু জানান, তিনি ছ’টি বিষয়ের উল্লেখ করে একটি সুপারিশ দাখিল করেছিলেন। ওই মামলায় এ দিন কলকাতা পুলিশ তাদের মতামত জানিয়ে ওই রিপোর্ট দিয়েছে।
মিটিং-মিছিলের জেরে হামেশাই নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কথা বললেও শহরের প্রাণকেন্দ্রে মিটিং-মিছিল বন্ধ হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শহরের প্রাণকেন্দ্রে মিটিং-মিছিল বন্ধের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর দলের একাধিক কর্মসূচিও মহানগরকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। অবশেষে মাস কয়েক আগে কলকাতা পুলিশ লালবাজারে বৈঠক ডেকে মেট্রো চ্যানেলে সভা-সমাবেশ বন্ধ করার কথা জানায়। সেই সময়ে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পুলিশের মতবিরোধও হয়েছিল।
এ দিন হাইকোর্টে দাখিল করা রিপোর্টে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, কাজের দিনে ধর্মতলা-বি বা দী বাগের মতো অফিসপাড়া এবং কলেজ স্কোয়ার ও যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সভা বা মিছিল করা যাবে না। ছুটির দিনে মিছিল করতে হলে কলকাতা পুরসভার ঠিক করে দেওয়া জায়গাতেই করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রেও শহরে যান চলাচল ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। লালবাজারের কর্তারা বলছেন, সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তাতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে মিছিলের জেরে নাগরিকেরা রাস্তায় বেরিয়ে নাকাল হবেন, সেটাও উচিত নয়। হাইকোর্টের রিপোর্টে সেটাই জানানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট না করে নাগরিকদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।”
যদিও কলকাতা পুলিশের এই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মতো দলগুলি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, “মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই পুলিশ এ ব্যাপারে একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আগেও পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে এই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
প্রতিবাদ-আন্দোলনে সমথর্র্ন জানালেও তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমরা আন্দোলনের জন্য মানুষের অসুবিধা তৈরি করার বিপক্ষে। এই দু’টি দিক খেয়াল রেখেই একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃণমূলের সরকার এসে গোড়া থেকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।”
যদিও প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের কথা। তিনি বলেন, “দিনের পর দিন মেট্রো চ্যানেল বা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে তিনিও তো অবস্থান করেছিলেন।” গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ হলে প্রয়োজনে নির্দেশ অমান্য করেই কংগ্রেস আন্দোলন করবে বলে মান্নান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মিছিলের জেরে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। তবে এই সুপারিশের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “কলকাতা পুরসভা জনমানবহীন জায়গায় সভা করতে বললে তা মেনে নেওয়া মুশকিল। আর ছুটির দিনে সভা করেই বা কী লাভ? শোনার জন্য মানুষ কোনও তো থাকবেন না!” পুলিশের নির্দেশ মানতে নারাজ এসইউসি-ও। তাদের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, “কলকাতা পুলিশ শাসকদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করলেও অন্য দল সে ভাবে চলতে বাধ্য নয়!”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.