মোদীমন্ত্র কানে পেয়ে বিহারে জাগতে চাইছে ছত্রভঙ্গ বিজেপি
কানে কানে ফোন। মুখে, “নমো নমো নরেন্দ্র। মোদী জিন্দাবাদ।”
বিহার বিজেপি-র কয়েকশো কর্মী ও কর্মকর্তা একাগ্র হয়ে শুনছেন এক জনেরই কথা। তাঁদের লড়াইয়ের কাণ্ডারী। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে দূরভাষে সেনাপতির ঘোষণা, “গুজরাতে বিজেপি জিতেছে, এ বার বিহারের পালা। আগামী লোকসভা ভোটে বিহারের সব ক’টি আসনেই জিততে হবে বিজেপি-কে।”
ধ্বনি ওঠে, “নমো নমো নরেন্দ্র। মোদী জিন্দাবাদ।”
নীতীশ কুমার তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করাতেই বিধানসভার মাঝপথে দল এখন রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে। বিজেপি লোকসভা ভোটের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে প্রচারের মুখ করাতেই এনডিএ ছেড়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে টেলিকনফারেন্সে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেই মোদী কেন্দ্রের শাসক দল কংগ্রেসকে নয়, প্রথম নিশানা করলেন বিহারের মুখমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেই। হুঁশিয়ারি দিলেন, এনডিএ ছাড়ার জন্য বিহারের মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। তাঁর কথায়, “বিহারের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। মানুষই তার জবাব দেবে।”
ফোনে সমস্বর জবাব, “নমো নমো নরেন্দ্র। মোদী জিন্দাবাদ।”
কথা মতো এ দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শুরু হয় মোদীর টেলিকনফারেন্স। অভিনব নতুন কিছু হতে যাচ্ছে, পটনায় বিজেপি অফিসে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিকেল থেকেই একটা আলাদা উৎসাহ। নির্দিষ্ট সময় আসতেই সকলের কানে তখন মোবাইল ফোন। বিভিন্ন জেলায় একই ভাবে প্রস্তুত ছিলেন দলীয় নেতারা। প্রথমেই মোদী কথা বলেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর সঙ্গে।
গুজরাতে বসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিহার বিজেপি-কে। বিহারের সব কেন্দ্রের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য হাতের কাছে রেখে প্রস্তুত হয়েই বসেছিলেন মোদী। লোকসভা নির্বাচনে গো-বলয়ের দু’টি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারই মোদীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। উত্তরপ্রদেশে আজ তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ অযোধ্যায় গিয়ে যখন রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি ফের উস্কে দিয়ে জল মাপার কাজটি শুরু করলেন, তখন মোদী শুরু করলেন বিহারের ছত্রভঙ্গ বিজেপি নেতাদের এককাট্টা করার কাজ। মোদীমন্ত্র কানে পেয়ে বিহারে বিজেপি-র নেতা-কর্মীদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজেপি নেতৃত্ব মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করুন, নেতা-কর্মীদের কাছে তিনিই যে সকলের নেতা, আজ সে কথাও প্রকাশ করার সুযোগ ছাড়েননি তাঁরা।
টেলি-যোগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সমবেত আলোচনা বিহার বিজেপির নেতা-কর্মীদের।
বিহারের রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে তো বলেই দিলেন, “বিহারের মানুষের ইচ্ছা যে আপনি প্রধানমন্ত্রী হোন।” গত ক’মাসে কথাটা হাজার বার শুনেছেন মোদী। বারবারই এড়িয়ে গিয়েছেন হাসিমুখে। আজও তার অন্যথা হয়নি। মঙ্গল পাণ্ডের ইচ্ছা প্রকাশের জবাবে তিনি সবার আগে যে আসল কাজটা জরুরি, তার কথা মনে করে দিয়েছেন। দাওয়াই দিয়েছেন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন করার।
তাতে ইন্ধন জোগাতে, কখনও মোদী তুলে এনেছেন বিহারের হারিয়ে ফেলা গৌরবের। বাঁকার জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলার সময় মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রয়াত নেতা দিগ্বিজয় সিংহের অবদানের কথা। প্রসঙ্গক্রমে স্বামী বিবেকানন্দের পথ অনুসরণেরও কথা বলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।
কখনও আবার তিনি উস্কে দিয়েছেন নীতীশ সম্পর্কে দলের নেতাদের ক্ষোভ। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার মোদীর সঙ্গে এক সময় নীতীশের যথেষ্ট সখ্য ছিল। সম্পর্কে ভাঙনের পরে যে ভাবে নীতীশ মুখ খোলার বা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনার কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তাতে বিজেপি নেতারাও পাল্টা আক্রমণের পথ নিয়েছেন। গোড়া থেকে নীতীশ-বিরোধী নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি হুমকি দিয়েছেন, নীতীশ মুখ খুললে বিজেপি-ও তার পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত।
আনুষ্ঠানিক প্রচারের প্রথম দিনেই মোদী বিহারে তাঁর রণকৌশল কী হবে, সে কথা কথা স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। জানিয়েছেন, এ রাজ্যে ভোটের আগে অন্তত চারটি বড় সভা হবে। অক্টোবরে বিজেপি-র ‘হুঙ্কার র্যালি’ যার অন্যতম। ওই সমাবেশে তিনি আসবেন। ভিন্রাজ্যে বসেই এ রাজ্যের নেতাদের কারও কারও শরীর-স্বাস্থের খোঁজ নিয়ে একটা ঘনিষ্ঠতার বাতাবরণ তৈরি করেন মোদী। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েন বিহারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে। ফোনে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মোদী। ফোনে আলাপচারিতা এ ভাবেই চলতে থাকে। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন গুজরাতের উন্নয়ন নিয়ে। নিজের কোর্টে বল পেয়ে মোদী বলেন, “গুজরাতে এক সময় কৃষিতে উন্নয়নের হার ছিল ২ শতাংশ। জল ছিল মাটির ১১ ফুট নীচে। সেচের আধুনিক পরিকল্পনায় এখন ওই হার ১১ শতাংশে পৌঁছেছে।” বিদ্যুতের প্রসঙ্গ উঠতেই মোদীর সংযোজন, “এক সময় লোক আমাকে বলতেন, অন্তত খেতে বসার সময় তো আলো, পাখা চালাতে দিন। এখন আমি গুজরাতের মানুষকে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিচ্ছি।” তবে এখন আর গুজরাত নয়, দিল্লির মসনদ তাঁর পাখির চোখ। সে কথা মাথায় রেখেই তিনি এ দিন বলেন, প্রতিটি রাজ্যের উন্নয়নের মডেল হওয়া উচিত আলাদা-আলাদা। এই প্রসঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে মোদী কবুল করেন, বিহারে যে ভাবে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করেছে, গুজরাত এখনও তা করেনি। গুজরাতে সেই কাজটা করতে চান তিনি। আর বিহারের কাছে তাঁর দাবি, “বিহারের ৪০টি কেন্দ্র থেকেই বিজেপি সাংসদ পাঠাতে হবে লোকসভায়।” সন্দেহ নেই, লালু-নীতীশদের রাজ্যে দলের লক্ষ্যটা বেশ বড় মাত্রাতেই বেঁধে দিতে চাইছেন মোদী। নিজে না এসেও।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.