সবুজ সঙ্কেত মিলেছে চলতি মাসের শুরুতে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিলম্বে বাগডোগরা বিমানবন্দরে রাতের উড়ান চালুর নির্দেশ দেওয়ায় কোমর বেঁধে নেমেছে রাজ্য সরকার। ওখানে নৈশ উড়ান চালু করার জন্য বুধবারেই এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে মহাকরণে ডেকে বৈঠক করেছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। পরপর দু’দিনে জোড়া তৎপরতায় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার ছবিটা স্পষ্ট।
মমতার তরফে তৎপরতাটা অবশ্য দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে যত বার বাগডোগরা দিয়ে যাতায়াত করেছেন, প্রায় প্রতি বারেই প্রশ্ন করেন, রাতে বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? শুধু প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হননি, জট কাটাতে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন বারবার।
বাগডোগরা বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর অধীন। সূর্যাস্তের পরে এত দিন সেখানে যাত্রিবিমান ওঠানামা করতে পারত তাদের অনুমতি না-থাকায়। সেটাই ছিল অন্যতম প্রধান জট। সমস্যা ছিল বায়ুসেনার লোকবল নিয়ে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার বারবার অনুরোধ করায় বায়ুসেনার লোকবল বাড়ানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে, এ বার থেকে চাইলে রাতেও বিমান ওঠানামা করতে পারবে বাগডোগরায়। সেই জন্য ১ জুলাই থেকে ওই বিমানবন্দরের রানওয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
এই সবুজ সঙ্কেত পেয়েই তৎপর হয়েছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই এয়ার ইন্ডিয়াকে চিঠি লেখেন মুখ্যসচিব। এ দিন মহাকরণে বিভিন্ন বিমান সংস্থার সঙ্গে বৈঠকেও বসেন মদনবাবু। এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট, গো এয়ার, ইন্ডিগো, জেট বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন। সব সংস্থার মধ্যে ইন্ডিগো ছাড়া বাকিরা বাগডোগরা থেকে নিয়মিতই উড়ান চালায়। মন্ত্রী বলেন, “বাগডোগরায় রাতে বিমান নামা ওঠার সুযোগকে সকলেই স্বাগত জানিয়েছেন। পাহাড়ের পরিবেশ আগের চেয়ে শান্ত হয়েছে। বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। তাই সারা দিনে যত বিমান ওড়ে, এখন তার চেয়েও বেশি উড়ানের প্রয়োজন। সেই কারণেই রাতে ওঠানামার অনুমতি পেয়ে আরও উড়ান আসবে।”
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাতে দু’-একটি উড়ান চালানোর জন্য বিমান সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। বিমান সংস্থাগুলি কিছু দিন সময় চেয়েছে। বাগডোগরায় রাতের বিমানের পথ খুলে যাওয়ায় শিল্পমহলও খুশি। এ দিনের বৈঠকে কোচবিহার থেকেও উড়ান চালু করার জন্য বিমান সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে। রাজ্যের পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ড্রুক (ভুটানের বিমান সংস্থা)-এর মতো আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাও রাতে বাগডোগরা থেকে উড়ান চালাতে আগ্রহী। এখনই বাগডোগরা থেকে পারো-য় উড়ান চালাচ্ছে তারা। আলাপনবাবুর কথায়, “সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পাহাড়ে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা চাইছি, তার আগেই বাগডোগরা থেকে রাতে বিমান চলাচল শুরু হয়ে যাক।”
কী বলছে বিমান সংস্থাগুলি?
বাগডোগরায় ইন্ডিগোর কোনও পরিকাঠামো নেই। তাই সেখানে উড়ান শুরু করতে কম পক্ষে দু’মাস লাগবে বলে জানিয়েছে তারা। তা ছাড়া শুধু রাতে বিমান ওঠানামার সুযোগটাকেই তারা বড় করে দেখছে না। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, নিয়মিত কত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই তাদের কাছে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থার প্রেসিডেন্ট আদিত্য ঘোষ অবশ্য কলকাতা-বাগডোগরা রুটে উড়ান শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী।
জেট, স্পাইসজেট, গো এয়ারের মতো সংস্থার প্রতিনিধিরাও জানান, হুট করে বাগডোগরায় রাতে বিমান চালানো মুশকিল। তার জন্য গোটা উড়ানসূচি বদল করতে হবে। এক কর্তার কথায়, “কলকাতা থেকে রাতে বাগডোগরায় পৌঁছে পর্যটকেরা কী করবেন, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে! যে-সব পর্যটক বিমান-সফর পছন্দ করবেন, তাঁরা তো সকাল সকাল বাগডোগরায় পৌঁছে পাহাড়ে চলে যেতেই চাইবেন। উল্টো দিকে রাতে বাগডোগরা থেকে কলকাতায় নামার পরে যাঁরা দেশের অন্যান্য প্রান্তে যেতে চাইবেন, তাঁরাও তা পারবেন না। এই অবস্থায় ব্যবসার দিকটি ভাবতে হবে আমাদের।”
তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পর্যটক বাড়লে রাতে উড়ান চালানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
|