হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন রাজ্যের বেশিরভাগ গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ এবং পাঠকেরা।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারগুলিতে রাখার জন্য রাজ্য সরকার সংবাদপত্রের যে তালিকা করে দিয়েছিল, আদালত তা পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছে। তালিকায় ছিল না বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকের কয়েকটি। গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষগুলির ধারণা, জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সরকার পুনর্বিবেচনা করে যে তালিকা তৈরি করবে, তাতে ওই সংবাদপত্রগুলি থাকবে।
আরামবাগ মহকুমা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক তপন রায় বলেন, “রাজ্য সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরে পাঠকেরা গণস্বাক্ষর করে প্রতিবাদপত্র পাঠান। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় পাঠকসংখ্যা কমতে থাকে।” তিনি জানান, ২০১২-এর মার্চে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৫৭১ জন পাঠক এই গ্রন্থাগারে আসতেন। বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলি রাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরের মাসেই পাঠকসংখ্যা কমে হয় ৩৬১। বর্তমানে পাঠকসংখ্যা প্রতি মাসে গড়ে ৩০৪। তিনি বলেন, “আশা করছি, হাইকোর্টের নির্দেশিকার ফলে ফের পাঠকসংখ্যা বাড়বে।”
বর্ধমান শহরের উদয়চাঁদ লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক শ্যামাপদ দাসও জানিয়েছেন, জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলি না থাকায় পাঠকের সংখ্যা কমতে কমতে আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে। পাঠকের সংখ্যা কমেছে কোচবিহারের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগার-সহ বিভিন্ন পাঠাগারেও। রায়গঞ্জের বিভিন্ন গ্রন্থাগারের সদস্যেরাও জানান, সরকারি নির্দেশের জেরে লাইব্রেরিগুলিতে পাঠকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তাঁদের আশা, এ বার তা ফের বাড়বে। একই কথা বলেন হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারের এক কর্মী। উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগারের কর্তৃপক্ষ ও পাঠকদের মনোভাবও একই রকম। এই বিখ্যাত গ্রন্থাগারেও জনপ্রিয় কাগজগুলি রাখতে চেয়ে পাঠকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল।
তবে গ্রন্থাগারে খবরের কাগজ রাখা নিয়ে হাইকোর্টের বক্তব্য শুনে “দারুণ খবর’’ বলে নিজের আনন্দ আর চেপে রাখতে পারলেন না রামমোহন রায় লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “লাইব্রেরিতে খবরের কাগজ রাখা না রাখা নিয়ে সরকারি ফতোয়া আমরা মানিনি। পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে আমরা গ্রন্থাগারের নিজস্ব তহবিলের টাকা দিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রায় সমস্ত খবরের কাগজ লাইব্রেরিতে রাখি।” দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েকটি গ্রন্থাগারও নিজেদের তহবিল থেকেই জনপ্রিয় কাগজগুলি রাখতেন। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ক্লাব মহকুমা গ্রন্থাগার সূত্রেও একই কথা জানা গিয়েছে। অনেক গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ অবশ্য পাঠকদের চাপ সত্ত্বেও শুধু সরকারি তালিকা মতোই খবরের কাগজ রাখতেন। তাতে একটা দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হত রোজ।
হাইকোর্টের রায়ে এই পরিবেশটিই বদলে যাবে বলে মনে করছেন অনেক গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। বহরমপুরের শতাব্দী প্রাচীন ‘বঙ্কিমচন্দ্র লাইব্রেরি’র আধিকারিক স্বপন দেবনাথের মনে হচ্ছে, আদালতের রায়ে পাঠকের স্বাধীনতা ফিরে এল। তাঁর কথায়, “পাঠকরা চাইতেন কিন্তু তাঁদের পছন্দের কাগজ দিতে পারতাম না। দমবন্ধ লাগত। এ বার পড়ার স্বাধীনতা ফিরে এল। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।” জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক গৌতম গুহরায়েরও একই মত। তাঁর কথায়, “এই নির্দেশ আসলে পাঠকদের জয়।” |