জেলার তিনটি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম তথা বাম দলগুলি। গোটা ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের সব ক’টি আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’-এর জন্যই তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি বলে বারবার সরব হয়েছেন বাম নেতৃত্ব।
সেই বাঁকুড়াতেই দাঁড়িয়ে নির্বাচনী সভায় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, কোথাও সন্ত্রাস চালানো হয়নি। যা শুনে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে কটাক্ষ করলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। বৃহস্পতিবার ছাতনা, শালতোড়া, সোনামুখী ও বড়জোড়াএই চার জায়গায় সভা করেন শুভেন্দু। দুপুরে ছাতনার ঝাটপাহাড়ির রেল ফটক ময়দানের নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, “রাজ্যে আট হাজার আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি। এর জন্য সিপিএমের মতো আমাদের টাঙ্গি, লাঠি নিয়ে গিয়ে ব্লক অফিসের দরজায় দাঁড়াতে হয়নি। কারও মাথাও ফাটাতে হয়নি। মানুষ ওদের হয়ে দাঁড়াতে চায়নি বলেই ওরা প্রার্থী দিতে পারেনি!” |
প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনা হল, দু’বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পরে এই জেলায় একাধিক সিপিএম কর্মী খুন হয়েছেন। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের বহু কর্মী এখনও সন্ত্রাসের ভয়ে গ্রামছাড়া। তৃণমূলের এই সন্ত্রাসের কারণেই তিনটি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। এমনকী বিষ্ণুপুর মহকুমার বদলে মনোনয়ন পর্ব সরাসরি জেলাশাসকের দফতরে করা হোক বলেও দাবি তুলেছিল বাম শিবির। কিন্তু তা হয়নি। মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিষ্ণুপুর মহকুমার ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠতে থাকে, বিক্ষিপ্ত ঝামেলাও বাধে কিছু জায়গায়। মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, কোতুলপুর, জয়পুর, পাত্রসায়রের মতো ব্লকগুলিতে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম। জয়পুর ব্লকে পঞ্চায়েতের ওই দু’টি স্তরে সব ক’টি আসনই বিরোধী শূন্য। পাত্রসায়র ব্লকে একটি মাত্র পঞ্চায়েতের একটি মাত্র আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে সিপিএম। গোটা জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ২৫০৫টি আসনের মধ্যে ৫৪৭টি এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের ৫৩৫টি আসনের মধ্যে ১১০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। গুটি কয়েক ছাড়া সব ক’টিতেই জিতেছে তৃণমূল।
এমন পরিস্থিতিতে শুভেন্দুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অমিয়বাবুর কটাক্ষ, “এতো পাগলের প্রলাপ! ওদের সন্ত্রাসের জেরে বিষ্ণুপুর মহকুমার চারটি ব্লকে প্রার্থী দেওয়া তো দূরের কথা, একটা পতাকাও টাঙাতে পারছি না আমরা!” প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের তরফে বাঁকুড়া জেলা পর্যবেক্ষক অজয় ঘোষের মন্তব্য, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে ভোটই করতে পারছি না। আমাদের বহু প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে।”
ছাতনার সভায় শুভেন্দু কটাক্ষ করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকেও। তিনি বলেন, “মীরাদেবী সিপিএমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উনি বুথে বুথে পুলিশ পাঠাবেন। কিন্তু আপনারা আপনাদের রায় স্বাধীন ভাবে দেবেন। আমরা সিপিএমের মতো চট তুলে দেখতে আসব না, কাকে ভোট দিচ্ছেন।” এ দিন শুভেন্দুবাবুর সভায় মাঠ ছিল ভর্তি। কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। |