বাবা প্রার্থী জেলা পরিষদে
তৃণমূল সভাপতির মেয়ে লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিটে
নির্বাচনে জেতার প্রশ্নে যে দলকে নিয়ে সবেচেয়ে দুশ্চিন্তা বাবার, সেই দলেরই প্রার্থী হয়েছেন মেয়ে।
বাবা-মেয়ের এই ভিন্ন মেরুতে হাঁটা নিয়ে আপাতত জোর চর্চা পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকে। বাবা রামলাল মাহাতো পাড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। ব্লকের একটি আসনে জেলা পরিষদের আসনে তিনি তৃণমূলের প্রার্থী। মেয়ে শেফালি মাহাতো আবার ওই ব্লকেরই দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কেটলাপুর গ্রামে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন। রাজনীতিতে যুযুধান দু’দলের দলের প্রার্থী হলেও তার প্রভাব সম্পর্কে পড়বে না বলে দাবি করেছেন বামা-মেয়ে দু’জনই। একে অপরকে আগাম শুভেচ্ছাও জানাচ্ছেন।
পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে। একদা জোটসঙ্গী তৃণমূলের লক্ষ্য, ওই ব্লকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই কংগ্রেস, সিপিএমকে হারিয়ে এলাকায় দলের বিস্তার ঘটানো। এই অঞ্চলে পঞ্চায়েত ভোটে দলের কাণ্ডারীও পেশায় শিক্ষক রামলালবাবু। ব্লকের পশ্চিমাঞ্চল থেকে প্রার্থী হয়ে দিনভর ঘুরে ভোটারদের বোঝাচ্ছেন, রাজ্যে তাঁদের দলের সরকার। ফলে পঞ্চায়েতে একমাত্র তৃণমূলকে সমর্থন করলেই এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার আসবে।
রামলাল মাহাতো ও শেফালি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
অন্যদিকে শেফালি প্রচারে বলছেন, এলাকায় বিধায়ক তাঁদের দলের। তাই কংগ্রেস জিতলেই এলাকায় আরও উন্নয়ন সম্ভব হবে। ঘটনা হল পাড়া ব্লকে ভোটের প্রচারে ব্লক তৃণমূল সভাপতির মেয়ের তাদের হয়ে প্রার্থী হওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনছে কংগ্রেস। জেলা পরিষদে রামলালবাবুর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী বলরাম মাহাতো সম্প্রতি সাঁওতালডিহিতে দলীয় সভায় বলেছিলেন, “রাজ্যে সরকার পরিচালনা করতে তৃণমূল ব্যর্থ। তাদের উন্নয়নের প্রচার কেউ শুনছে না। এমনকী রামলালবাবু তাঁর মেয়েকেও নিজেদের দলে টানতে ব্যর্থ হয়েছেন।” উপস্থিত শ্রোতাদের হাততালির আওয়াজেই বোঝা গিয়েছিল বাবা-মেয়ের এই লড়াই উপভোগ করছেন ভোটাররা। দুবড়ার কংগ্রেস নেতা রিজয়ান আহমেদ বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গেই মূল লড়াই আমাদের। আর তাদেরই ব্লক সভাপতির মেয়ে আমাদের প্রার্থী। কেটলাপুর গ্রামে এটা আলোচনার বিষয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ারও।” দুবড়া থেকে কাঁচা রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার গেলেই কেটলাপুর গ্রাম। কংগ্রেসের নির্বাচনী কার্যালয়ে কথা হচ্ছিল শেফালির সঙ্গে। পাশেই ছিলেন কংগ্রেস কর্মী স্বামী দীনবন্ধু মাহাতো।
আটপৌরে গৃহবধূ হলেও শেফালির রাজনীতি, নির্বাচন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। জানালেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যাবতীয় জটিলতার জন্য তৃণমূলই দায়ী। গ্রামে বাবার দল তৃণমূলের সঙ্গেই যে তাঁর মূল লড়াই, তা-ও জানাতে ভুললেন না। বস্তুত, রামলালবাবুও একদা কংগ্রেস করতেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে সেই দলে। ফলে বিয়ের আগে থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে ধারণা রয়েছে শেফালির। তাঁর বিয়ে হয়েছে এলাকায় ঘোরতর কংগ্রেসি পরিবার বলে পরিচিত রেশন ডিলার জীবন মাহাতোর ছেলে দীনবন্ধুর সঙ্গে। শেফালির কথায়, “বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই মেয়েদের আসল বাড়ি হয়ে ওঠে। এঁরাও কংগ্রেসের সমর্থক। তাই ভোটের আগে যখন কংগ্রেসের প্রার্থী হতে বলেছিল, দ্বিধা করিনি।”
বাবার সঙ্গে অবশ্য ভোট কথা হয়নি শেফালির। বলছেন, “বাবা অন্য দলের নেতা হতেই পারেন। কিন্তু আমাকে কংগ্রেসের প্রার্থী না হওয়ার জন্য চাপ দেননি। ইচ্ছা আছে জেতার পরে বাবার আশীর্বাদ নিতে যাব।”
মেয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ নেই রামলালবাবুর। বললেন, “ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে নিজস্ব চিন্তাভাবনায় উত্‌সাহ দিয়েছি। স্বাধীন চিন্তা করেই শেফালি কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছে। আপত্তি কেন করব?” এলাকায় শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা রয়েছে রামলালবাবুর। পরিচিত “রামলাল মাস্টার” নামেই। বিলক্ষণ জানেন, কংগ্রেসের ভোট কাটা তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারে। এ-ও জানেন, মেয়েকে প্রার্থী করে বিষয়টিকে প্রচারে আনছে কংগ্রেস। তাই তিনি বলেন, “নির্বাচন হচ্ছে এলাকার উন্নয়ন কারা করতে পারবে, তার উপরে। বাবার দলের বিরুদ্ধে মেয়ের প্রার্থী ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের মূল উদ্দশ্যের কোনও সম্পর্কই নেই।”
তবে, মেয়ে জিতলে এলাকায় উন্নয়নের কাজে পরামর্শ দিতে রাজি বাবা। বলেন “জিতলে শেফালি জনপ্রতিনিধি হবে। এলাকায় কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেই হবে।”
হাজার হোক মেয়ে তো!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.