সাঁওতাল মর্যাদার ডাক, যাদবপুরে আজ ‘হুল’ |
এই প্রথম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে ‘হুল’ উৎসবের আয়োজন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতাল ছাত্রছাত্রীরা। ফি বছর ৩০ জুন রাজ্যের নানা প্রান্তে সাঁওতাল বিদ্রোহ বা ‘হুল’ স্মরণে পরব হয়। তবু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের আক্ষেপ, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তির-ধনুক হাতে বুক চিতিয়ে লড়া সেই ইতিহাসকে মনে রাখেননি বহু সংখ্যাগুরু মানুষই। অথচ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে সঙিন তুলে ধরেন সিধো-কানহুরাই।
সেই ‘ভুলে’ যাওয়াকে ধাক্কা দিতেই আজ, শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হুল উৎসবের আয়োজন করতে চলেছেন বেশ কিছু সাঁওতাল ছাত্রছাত্রী। ছুটির পরে ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় এই ডাক দিয়েছেন তাঁরা। অন্যতম উদ্যোক্তা, লাইব্রেরি সায়েন্সের পড়ুয়া সুশীল মান্ডি বলেন, “সাঁওতালেরা যে পরিস্থিতিতে বিদ্রোহ করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমরা পর্যালোচনা করতে চাই। সাঁওতালি ও বাংলা দুই ভাষাতেই আমরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব। এই প্রথম এমন উদ্যোগ।” |
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র মোজেস টুডু জানান, সাঁওতাল সমাজের প্রতি এক শ্রেণির মানুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলাই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য। কেননা, অন্ত্যজ বা দলিত শ্রেণির মানুষদের টেনে তোলার জন্য যে সংরক্ষণের সূচনা, তারই জেরে তাঁদের এক রকম ‘সংরক্ষিত মানুষে’র পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে উচ্চবর্ণের মানুষদের একটা বড় অংশ। তথ্যপ্রযুক্তির ছাত্রী পূর্ণিমা হেমব্রমের মতে, “রাজনীতির কারবারিদের দিয়ে আদিবাসী সমাজের প্রকৃত উন্নতি হবে না। সাঁওতাল-সমাজকেই নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হতে হবে।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স-আর্টস মোড়ে দুপুর ১টায় সাঁওতালি গান গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন ছাত্রছাত্রীরা। বিশেষ অতিথি সারা ভারত সাঁওতালি সাহিত্যসভার সভাপতি দূরবীন সোরেন ও সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতিবিদ অসিত রায়। আমন্ত্রণ গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস্ রজত রায়ের কাছে। ছাত্রছাত্রীরা কেউ সাঁওতালি সুরে বাঁশি বাজাবেন, কারও হাতে ধামসা-মাদল। হরেক সাঁওতালি নাচে মিলবে অনেক পা। ফুড টেকনোলজির ছাত্রী কমলা মুর্মু, বাংলা বিভাগের সোমা মুর্মুরা বলছেন, “আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি-সমাজ একটা সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আমরা কী করে পাল্টা ধাক্কা দিতে পারি, সেই পথ খোঁজাটাই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।” |