গণতন্ত্রেই আস্থা, ভোটে লড়ছে আদিবাসী গাঁওতা
পাথর শিল্পাঞ্চলে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে একদিন যাঁরা একজোট হয়েছিলেন, সেই ‘বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা’ এ বার সংসদীয় গণতন্ত্রে নিজেদের সামিল করল। পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আদিবাসী গাঁওতার সদস্যেরা।
কয়েক বছর আগে পাথর খাদান ও ক্রাশারের মালিকপক্ষের সঙ্গে আদিবাসীদের লড়াইয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মহম্মদবাজারের পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চল। আদিবাসীদের সমর্থনে তখন এগিয়ে এসেছিল গাঁওতা। টানা আন্দোলনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল খাদানের উৎপাদন। মালিকপক্ষ ও প্রশাসনের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, গাঁওতার পিছনে মাওবাদীরাই সক্রিয়।
সেই গাঁওতাই এ বার সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস রেখে নির্বাচনে নামছে। সংগঠনের নেতাদের দাবি, বীরভূমের ছ’টি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৩টি, পঞ্চায়েত সমিতির ১৩টি এবং জেলা পরিষদের তিনটি আসনে গাঁওতার নির্দল প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমনকী এই জেলারই লোবায় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সঙ্গেও জোট বেঁধেছেন গাঁওতা নেতৃত্ব।
আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবীন সোরেন বলছেন, “এখানকার রাস্তাঘাট অনুন্নত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার মান খুবই খারাপ। ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কোনও রকম উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। তাই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছি।”
সাগরবাঁধি, বারোমেশিয়া, পাঁচামি, ভাঁড়কাঁটা প্রভৃতি আদিবাসী এলাকাগুলিতে বসবাসকারী আদিবাসীদের বড় অংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিলেও উন্নয়নের আলো এখানে পৌঁছয়নি। এ বার তাঁরা তাই নিজেরাই ভোটে জিতে এসে নিজেদের উন্নয়ন করতে চান। শুধু মহম্মদবাজারই নয়, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর, মুরারই, রাজনগর, দুবরাজপুর থানার বহু পঞ্চায়েতেই গাঁওতা নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে।
সংগঠনের আর এক নেতা, পেশায় স্কুলশিক্ষক সুনীল সোরেন বলেন, “প্রতিবারই ভোটের সময় কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে এসেছি। কিন্তু যাঁরাই জিতেছেন, পরে তাঁরা আর এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবেননি।”
এ বার উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার ৫৪ জন মাঝি হাড়ামদের (মোড়ল) নিয়ে বৈঠক করে গাঁওতা। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, সংগঠন এ বার প্রার্থী দেবে। তারপরে এলাকার লোকজনদের মত নিয়ে প্রার্থী ঠিক করা হয়। “তাঁদেরই প্রার্থী করা হয়েছে, যাঁদের উন্নয়নের প্রয়োজনে নিজস্ব মতামত রয়েছে। এবং তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের স্বার্থে কাজ করবেন না।” দাবি সুনীল সোরেনের।
গাঁওতার বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। প্রচার তো দূরের কথা, গাঁওতার লোকজন তাদের প্রার্থীদের এলাকায় দেওয়াল লিখনও করতে দিচ্ছেন না বলে দাবি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। পঞ্চায়েতে সাগরবাঁধির ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী মাকু হাঁসদার বাড়ির দেওয়ালে থাকা নিজেরই দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য সরাসরি গাঁওতার নাম নেননি।
তাঁর দাবি, “রাতের অন্ধকারে কারা ওই কাজ করেছে, বুঝতে পারিনি। তবে, এটাও ঠিক, এলাকায় কোনও রাজনৈতিক প্রার্থীদেরই দেওয়াল লিখন নেই। শুধু গাঁওতার নির্দল প্রার্থীদের পোস্টারগুলি দিব্যি টিকে আছে।”
সব মিলিয়ে আদিবাসী গাঁওতার ভোটে নামার সিদ্ধান্তকে সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাগত জানালেও তাদের বার্তা, মাঝপথেই সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা দেখাতে ভুলে না যান গাঁওতা নেতৃত্ব।
আর সেই নেতৃত্ব বলছেন, “আমরা যে মাওবাদী নই, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, নির্বাচনে সামিল হওয়ায় তা প্রমাণ হয়ে গেল। তবে পথ চলা এখনও অনেকটাই বাকি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.