বয়কটে দাবি মেটেনি,
ভোটে ফিরছে মালঞ্চা
ন্নয়নের দাবি মেটেনি বলে বিধানসভা ভোট বয়কট করেছিলেন গ্রামবাসী। তাঁদের আশা ছিল, এতেই বোধহয় বেশ শিক্ষা দেওয়া যাবে প্রশাসনকে। খুলে যাবে উন্নয়নের দরজা।
দু’বছর পেরোলেও প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। ভোট বয়কটে লাভ নেই, বরং উন্নয়নের জন্য সোচ্চার হতে প্রয়োজন নিজেদের প্রতিনিধি, বুঝেছে কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের মালঞ্চা গ্রাম। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে তাই ফের বুথমুখো হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামের মানুষ।
বিধানসভা ভোটের আগে অনুন্নয়নের যে অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মালঞ্চার বাসিন্দারা, এ বার সে নিয়ে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, পাশের মেইগাছি গ্রাম পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। অথচ তাদের এখনও প্যাচপ্যাচে কাদা পেরিয়ে গ্রামে ঢুকতে হয়। গ্রামের এই রাস্তায় কিছুটা অংশে এক সময়ে ইট ফেলা হয়েছিল, এখন শুধু সেই চিহ্নটুকুই বেঁচে আছে।
বাঁশের সেতুর ভরসাতেই যতায়াত।
মালঞ্চা গ্রামের দু’দিক ব্রাহ্মণী নদী দিয়ে ঘেরা। সরু এক ফালি এই গ্রামে জনসংখ্যা কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাতশোর আশপাশে। গ্রামের উত্তরে খেত জমি। সিঙ্গি পঞ্চায়েত দফতরে যেতে ওই জমির আলপথই ভরসা মালঞ্চার মানুষের। পূর্ব ও দক্ষিণে বয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণী নদীতে কোনও স্থায়ী সেতু নেই। অস্থায়ী বাঁশের সেতুই ভরসা বছরভর। বর্ষায় নদীর জল বাড়লে নড়বড়ে সেতু দিয়ে যাতায়াতে ভরসা পান না বাসিন্দারা। তখন নৌকা ভাড়া করতে হয়। বাজারহাট, স্কুল বা হাসপাতালযেখানেই যাওয়ার প্রয়োজন পড়ুক, নদী পেরোতেই হয়। গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের যে ক’জনের মোটরবাইক বা মোটরভ্যান রয়েছে, বৃষ্টির ভয়ে নদীর পাড়, দেয়ামিন বা খাসপুর গ্রামে রেখে আসতে হয়।
এই সব অসুবিধা মেটেনি বলেই দু’বছর আগে ভোট দিতে যাননি এই গ্রামের মানুষজন। কিন্তু সমস্যা তাতে মেটেনি। এ বার এই গ্রামে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূলতিন পক্ষেরই প্রার্থী রয়েছে। নদীর পাড়ে বসে এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আমি সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলাম। বারবার বলেও গ্রামের জন্য উন্নয়নের কোনও কাজ করাতে পারিনি। ভোট বয়কট করেও তো কোনও লাভ হয়নি।” গ্রামের বাসিন্দা হিরু মাঝি, সুরজিত্‌ মণ্ডলেরা বলেন, “ভোট না দিতে গিয়ে কোনও উন্নতি হয়নি। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে আমাদের গ্রামের জন্য বলার লোক দরকার। তা না হলে এক ঝুড়ি মাটিও পড়বে না।” দিলীপ মণ্ডল, বাবু মণ্ডলদেরও মত, “এমনিতেই আমাদের গ্রামের কথা কেউ শোনে না। পঞ্চায়েত সদস্য না থাকলে তো আরও শুনবে না। একশো দিনের কাজও পাওয়া যাবে না।”
এই রাস্তার ভরসাতেই জীবন চলে।
গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ চাষবাসের উপরে নির্ভরশীল। খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ট্রাক্টর যেতে পারে না, চাষের কাজে ভরসা সেই গরু-মোষ। গ্রামের বধূ পার্বতী মণ্ডল, সুখী মাঝিদের বক্তব্য, “সেতু আর রাস্তা না থাকায় ছেলেমেয়েরা ঠিক মতো পড়াশোনা করতে পারছে না। উন্নয়ন যেখানে ভোটের উপরে নির্ভর করছে, ভোটে ফেরা ছাড়া আর উপায় কী!”
সিপিএমের প্রার্থী বাবু মাঝি বলছেন, “আমরা এই গ্রামে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে জিততাম। এ বার কী হবে জানি না। তবে উন্নয়নের কাজ করতেই হবে।” তৃণমূল প্রার্থী ডালিম ঘোষেরও বক্তব্য। “গ্রামের মানুষজন উন্নয়ন চান। এ বার সেটাই হবে।” কংগ্রেস নেতা আনন্দগোপাল মণ্ডল বলেন, “এলাকার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মালঞ্চা গ্রামে উন্নয়নের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথার নড়চড় হবে না।”
ভোট আসতেই প্রতিশ্রুতি-বর্ষণ শুরু হয়েছে। ভোটে ফেরায় প্রতিশ্রুতি পূরণও হবে, আশায় বাঁচছে মালঞ্চা।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.