এগারো দিন কেটে গেলেও কেতুগ্রামের গুপ্ত পরিবারের অষ্টধাতুর মূর্তির খোঁজ পায়নি পুলিশ। এরসঙ্গেই কেতুগ্রামের গোপালপুর ও জৌ গ্রামে মূর্তি চুরির ঘটনারও কোনও কিনারা হয়নি। এর মধ্যেই ‘সতীপীঠ’ অট্টহাস মন্দিরে চুরি হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জমছে এলাকাবাসীদের মনে। পুলিশও চুরির কিনারা করতে তত্পর হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এই ধরণের চুরির কিনারা করতে একটু সময় লাগবে। তবে আশা করি প্রতিটি ঘটনারই সমাধান সম্ভব হবে।” |
গত ২২ জুন রাতে নিরোল গ্রামের গুপ্ত পরিবারের কামাখ্যা মন্দিরের তালা ভেঙে তিনশো বছরের পুরনো অষ্টধাতুর মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি চুরি করে নিয়ে যায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। খোয়া যায় দেবীর গয়না ও কষ্টি পাথরের শালগ্রাম শিলাও। গুপ্ত পরিবারের সদস্যদের দাবি, অসমের কামাখ্যা থেকে ওই মূর্তিটি নিয়ে এসে তাঁদের পূর্বপুরুষ রামরতন গুপ্ত এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে জেলা পুলিশ সিআইডি বিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এসে ছবি, হাতের ছাপ সংগ্রহও করেছেন। তবে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ঘটনার তদন্ত করার জন্য পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের বাড়ি আসছেন। জিজ্ঞাসাবাদও করছেন। কিন্তু মূর্তি উদ্ধারের বিষয়টি প্রায় কিছুই এগোয়নি। |
কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, পুলিশ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঘটনার দিনই মুর্শিদাবাদের সালার থেকে ৪ জন ও নিরোলের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নিরোলের কামাখ্যা মন্দিরের পিছনে একটা ডোবা রয়েছে। সেই জলেও মূর্তির খোঁজ করা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। ওই পরিবারের এক সদস্য জয়দীপ গুপ্ত বলেন, “পুলিশ হয়তো নানা ভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা আলো দেখতে পাচ্ছি না।” আরেক সদস্য সোনালী গুপ্ত বলেন, “অম্বুবাচীর দিন মূর্তি চুরি হয়েছিল। হয়তো কেউ মূর্তিটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে পুজো করছে, তাই পুলিশ চোরের নাগাল পাচ্ছে না।” তবে পুলিশের ধারণা, এই চুরির সঙ্গে পরিবারের ঘনিষ্ঠদের যোগ থাকায় তদন্ত করতে সমস্যা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মূর্তি উদ্ধার করার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি পর্যন্ত বারবার বলছেন। আর সন্দেহভাজনদের ধরতে গিয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশকে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।” |
শুধু নিরোল নয়, গত ডিসেম্বরে গোপালপুর গ্রামের দত্ত পরিবারের রাধা মূর্তি চুরির ঘটনারও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। পরিবারের লোকেদের দাবি, আড়াই কিলো সোনার এই মূর্তিটি বৃন্দাবন থেকে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দিরের পুরোহিত-সহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করে। এই ঘটনাতেও পুলিশের ধারণা, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই মূর্তি চুরি হয়। এ ছাড়া মূর্তিটি আদৌ সোনার ছিল কি না তা নিয়েও পুলিশের সন্দেহ রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্য ভাস্কর দে-র অভিযোগ, “পুলিশ কিছু দিন নড়াচড়া করার পরে তদন্ত আর এগোয়নি।” জৌগ্রামেও গত মাসে মন্দির থেকে অষ্টধাতুর মূর্তি ও বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস চুরি করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনারও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
রাজ্য পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সুপারিনটেন্ডেন্ট অমল রায় বলেন, “এ সব ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূর্তিগুলি বাংলাদেশ হয়ে নেপালে চলে যায়। সেখান থেকে লন্ডন। এ ধরণের মূর্তির বিদেশে ভাল দাম পাওয়া যায়।”
|
বৃহস্পতিবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ও পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ছবি।
|
পুরনো খবর: চুরি গেল মূর্তি |