তৃণমূলের ছায়া সরতেই চড়-কাণ্ডে সক্রিয় পুলিশ
জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারের আইন থাকা সত্ত্বেও রবিবার বেনিয়াপুকুরের নার্সিংহোমে চিকিৎসককে থাপ্পড় মারার ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তড়িঘড়ি জামিন দিয়েছিল পুলিশ। ২০০৯ সালে পাশ হওয়া একটি আইনে এই ধরনের অপরাধ জামিন-অযোগ্য ধারায় পড়ে। অভিযোগ, তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র সুবাদেই সোমবার রাতে আসিফ খানকে ধরে সঙ্গে সঙ্গেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয় ভারতীয় দণ্ডবিধির লঘু ধারা দিয়ে। আরও অভিযোগ, মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতারা এই ঘটনা থেকে সরে দাঁড়ানোয় ফের ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। পুলিশের কর্তারা কেউ সরকারি ভাবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসারের যুক্তি, তাঁরা এমন ভাবে এগোতে চান যাতে কোনও ভাবেই অভিযুক্ত জামিন না পান।
রবিবার সকালে বাবাকে বেনিয়াপুকুরের একটি নার্সিংহোম থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন আসিফ খান। সন্ধ্যায় বাবা ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি ফের তাঁকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক দিলনওয়াজ আহমেদ তাঁর কাছে সকালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখতে চান। বলেন, ওই সার্টিফিকেট না দেখলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে যাবে। তাতেই উত্তেজিত হয়ে ওই চিকিৎসককে দুই থাপ্পড় মারেন আসিফ। রাতে ওই নার্সিংহোম থেকে নিয়ে গিয়ে অন্য নার্সিংহোমে বাবাকে ভর্তি করান তিনি। সোমবার সকালে তাঁর বাবা সেখানে মারা যান।
কেন পুলিশ ২০০৯ সালের আইনে অভিযুক্ত আসিফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল না? পুলিশের বক্তব্য, ২০০৯ সালের আইনে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করতে বলা হলেও তথ্যপ্রমাণ সঠিক ভাবে জোগাড় না করে গ্রেফতার করা হলে আদালত থেকে অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নার্সিংহোমটির মালিক মহম্মদ শাহনওয়াজ এ দিন বলেন, “নার্সিংহোমে চড়াও হয়ে চিকিৎসক ও কর্মী নিগ্রহের ঘটনায় সোমবার রাতেই আমি বেনিয়াপুকুর থানার ওসি-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযোগ পাঠিয়েছি পুলিশ কমিশনার এবং ডেপুটি কমিশনারের (দক্ষিণ-পূর্ব) কাছেও। সিসিটিভি-র ফুটেজও জমা দিয়েছি। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কী ভাবে আসিফ খান দিলনওয়াজ আহমেদকে দু’বার থাপ্পড় মারছেন।” তার পরেও আসিফ খান জামিন পেয়ে যাওয়ায় হতাশ ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীরা। ফের আসিফ ও তাঁর দলবল চড়াও হয়ে হামলা চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
কোন আইন
কী বলা হয়েছে
প্রশ্ন উঠেছে, নার্সিংহোমে সিসিটিভির ফুটেজে ওই ঘটনার ছবি এই মামলায় যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে কি না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাবে ‘প্রভাবশালী’ আসিফকে জামিনে ছাড়া হলে তিনি যে বাইরে থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এক পুলিশ কর্তা এ দিন বলেন, “আসিফ খানকে তখনই জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হবে, যখন নিশ্চিত থাকতে পারব যে তিনি কোনও ভাবেই জামিন পাবেন না। আমরা সব দিক বুঝেই এগোচ্ছি।” সোমবার রাতে আসিফকে গ্রেফতার করার সময়ে এই বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি কেন?
অভিযোগ, রবিবার রাতে নার্সিংহোমে দাঁড়িয়েই আসিফ নিজেকে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ ও ‘পরিবর্তনের সৈনিক’ বলে দাবি করেন। প্রথমে পুলিশও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চায়নি। সোমবার রাতে আসিফকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই থানা থেকে জামিন দিয়ে দেয়। পুলিশ সূত্রে অভিযোগ, আসিফ নিজেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পুলিশকে চাপে রাখতেন।
মঙ্গলবার মুকুলবাবু জানিয়ে দেন, “আসিফ আমার পরিচিত ঠিকই। কিন্তু আমার চেনা লোক যদি কোনও অন্যায় করে, সেটা তো সমর্থনযোগ্য নয়।” পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, ইদানীং আসিফের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। তৃণমূল অন্দরের খবর, চিকিৎসককে চড় মারায় আসিফের উপরে দলীয় নেতৃত্ব খুবই বিরক্ত। তা সত্ত্বেও কেন পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হামলা নিরোধক আইনে ব্যবস্থা নিল না সেই প্রশ্ন উঠেছে। আসিফের বিরুদ্ধে বেনিয়াপুকুর থানায় আগেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নিগৃহীত চিকিৎসক। সোমবার রাতে বেনিয়াপুকুর থানার নূরউল্লা ডক্টর লেনের ওই নার্সিংহোমের তরফেও অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় আসিফের সঙ্গে নিজের বর্তমান সম্পর্ক পরিষ্কার করে দেওয়ার পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের চিকিৎসা সেলের নেতারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করেছেন। চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি, তথা তৃণমূলের ডক্টরস সেল-এর অন্যতম কর্তা নির্মল মাজি এ দিন বলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন, এ ধরনের অপরাধের ক্ষমা নেই। এ ব্যাপারে যা আইন আছে, সেটাই গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োগ করা উচিত। পুলিশ যেন এই ঘটনাকে লঘু করে না দেখে।” তাঁদের সংগঠন নিগৃহীত চিকিৎসকের পাশে রয়েছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
আইএমএ-র সম্পাদক তথা তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেনও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পাশাপাশি, ওই চিকিৎসক কোনও ভুল করলে তারও বিচার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অভিযুক্ত আসিফ অবশ্য এ দিন বলেন, “বাবা মারা যাওয়ার পরে আমার মন ঠিক নেই। এ সব নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাইছি না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.