দুটি প্রকল্প নিয়ে মামলা করলেও ত্রিফলা আলো, জোড়াপানি সংস্কার, ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানো নিয়ে বহু কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়ে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নীরব কেন সেই প্রশ্ন তুলল দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস। মঙ্গলবার দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটকের নেতৃত্বে এসজেডিএ-এর অফিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সুজয়বাবুরা এসজেডিএ-এর সব সদস্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবিতে সরব হয়েছেন। যে সব ঠিকাদার -ইঞ্জিনিয়র গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক নেতা-কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বলে সুজয়বাবুর দাবি। তিনি বলেন, “বাতাসে অনেক কথাই ভাসছে। অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। কে, কত টাকা নিয়েছেন, কার কী ভূমিকা তা নিশ্চয়ই তদন্তে ধরা পড়বে। আমরা আশা করব, সঠিক তদন্ত হবে। যা সত্যি তা জনসমক্ষে আনা হবে। কাউকে আড়ালের চেষ্টা হলে মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না।”
এসজেডিও মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী বলেন “আমরা দাবিপত্র পেয়েছি। সব খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন জানান, সব অভিযোগ নিয়েই তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, “ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।”
জেলা কংগ্রেসের নামে বিক্ষোভ-আন্দোলন হলেও সেখানে অবশ্য জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা এসজেডিএ-এর সদস্য শঙ্কর মালাকার ছিলেন না। তবে সুজয়বাবুরা যে সব ব্যাপারে তদন্ত চেয়েছেন তা নিয়ে তিনিও কার্যত একমত হয়েছেন। এমনকী, এসজেডিএ-এর সব সদস্যের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হওয়া দরকার বলে শঙ্করবাবু মনে করেন। তাঁর কথায়, “সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ যেখানে উঠেছে সেখানে সকলের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। কংগ্রেসের তরফে লাগাতার আন্দোলন চলবে।”
প্রসঙ্গত, সোমবার জেলা যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভার সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে তরফে এসজেডিএ-এর সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়। দলীয় রাজনীতিতে অভিজিৎবাবু জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। পক্ষান্তরে, ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় জেলা কংগ্রেসের অন্দরে শঙ্করবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত সুজয়বাবু আসরে নামায় তা নিয়ে নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়। বিশেষত, এসজেডিএ-এর সদস্য তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতির ভূমিকা নিয়েও পরোক্ষ ভাবে সুজয়বাবুরা প্রশ্ন তুলছেন কি না তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়। সুজয়বাবু অবশ্য জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সৈনিক হিসেবে আন্দোলন করার দায় থেকেই তিনি রাস্তায় নেমেছেন। যদিও শঙ্করবাবু তাঁর দলের বিরোধী শিবিরের নেতা সুজয়বাবুকে গুরুত্ব দেননি। তাঁর দাবি, “এ ধরনের ব্যাপারকে অতীতে গুরুত্ব দিইনি। এখনও দেব না।”
এ দিন সুজয়বাবু শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় বসানো সিসিটিভি, আনারস উৎসব, জোড়াপানি নদীর মাটি তোলা, ও ত্রিফলা আলো এই চারটি কাজের ব্যাপারে বিশদে জানতে চেয়েছেন। সে জন্য তথ্য জানার অধিকার আইনে তিনি চিঠিও দিয়েছেন এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে। সুজয়বাবু বলেন, “কেন এই কটি বিষয়কে আড়ালে রাখা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় যারা জড়িত তাঁদেরও ছাড়া হবে না। যে টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে তা শহরের মানুষের টাকা। তাই সমস্ত কাজের সঠিক হিসেব চাই।” |