বাণিজ্যিক বহুতল তৈরি করতে গিয়ে পাহাড়ি ঝোরা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তরায়ণ উপনগরীর নির্মাতা লক্ষ্মী টাউনশিপ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ এবং অপর একটি প্রমোটার সংস্থার বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ি অদূরে মাটিগাড়ায় উত্তরায়ণ উপনগরীর ওই এলাকায় নির্মাণ কাজ করছে ‘মেগা বিল্ডার্স’ নামে একটি সংস্থা। উত্তরায়ণ উপনগরীর নির্মাতা লক্ষ্মী টাউনশিপ লিমিটেডের তরফে জানানো হয়েছে, ওই প্রমোটার সংস্থাকে ঝোরা লাগোয়া জায়গাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে নির্মাণ কাজের জন্য। তারাই সেখানে বহুতল তৈরি করছে। তা নিয়েও সম্প্রতি অবৈধ নির্মাণের মামলা হয়েছে উত্তরায়ণ রেসিডেন্সি অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে। তবে ঝোরা বন্ধ করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন আশেপাশে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন। |
মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে এই পাহাড়ি ঝোরাটি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বিষয়টি জানতে পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মাটিগাড়ার বিডিও বীর বিক্রম রাই। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক ঝোরা এ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ। দ্রুত ওই এলাকায় বাস্তুকারদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি।” অভিযুক্ত লক্ষ্মী টাউনশিপ মিলিটেডের উত্তরায়ণ উপনগরীর দায়িত্বে থাকা অন্যতম আধিকারিক হেমন্ত কলিতার দাবি, “ঝোরা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ঝোরায় কোনওরকম মাটি ফেলা হলে নির্মাণকারী সংস্থার তরফে তা তুলে দেওয়া হবে।” ঝোরা বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগ পৌঁছেছে উপনগরীর পাশে থাকা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক শাখায়। সেখানে দায়িত্বে থাকা আধিকারিক গৌতম পাল বলেন, “আমারাও অভিযোগ পেয়েছি। ঝোরা বন্ধ করায় অভিযুক্ত লক্ষ্মী টাউনশিপ কর্তৃপক্ষ এবং নির্মাণকারী সংস্থা উভয়কেই আমরা নোটিশ পাঠাব।”
মেগা বিল্ডার্স সংস্থার অন্যতম কর্ণধার নরেশ অগ্রবালের দাবি, ভিতের নির্মাণ কাজ করার জন্য মাটি খুঁড়তে হয়েছে। সেগুলি ঝোরার ধারে রাখা হয়েছে। ঢালাইয়ের শেষ হলে ওই মাটিগুলি তুলে ভিতে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “ঝোরা থেকে অন্তত ৫০ ফুট দূরে মাটি ফেলা রয়েছে। কেন ঝোরা বন্ধ করার অভিযোগ উঠছে বুঝতে পারছি না।”
লাগোয়া এলাকায় বাসিন্দা দীনেশ রায়, দাউদ মিয়াঁ, রতন রায়রা অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁরা জানান, এই উপনগরীর এলাকায় আগে আরও তিনটি ঝোরা ছিল। নির্মাণ কাজের জেরে সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এই ঝোরাটিও মাটি ফেলে ভরাট করার চেষ্টা হচ্ছে। আগেও ঝোরাগুলি এ ভাবে ধীরে ধীরে ভরাট করা হয়েছে। বারবার নিষেধ করা হলেও তারা কোনও কথাই শুনছেন না। ঝোরা লাগোয়া একটি পুরনো মন্দির রয়েছে। কর্মকর্তাদের অন্যতম শ্যাম থাপা জানান, মাটি ফেলে ঝোরার অনেকাংশ ইতিমধ্যেই ভরাট হয়ে গিয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “পাহাড়ি ঝোরা বন্ধ হলে পরিবেশের উপর কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় হলে লাগোয়া এলাকার সকলকেরই সমস্যা হতে পারে। পরিবেশ বিপর্যয়ে কী হতে পারে তার দৃষ্টান্ত উত্তরাখণ্ডে অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে।” |