শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) তরফে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নয়ছয়ের স্পষ্ট অভিযোগ জমা পড়ার ২৪ ঘন্টা পরেও জোরকদমে তদন্ত শুরু না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারি সূত্রের খবর, শুক্রবার দার্জিলিং সফর সেরে ফেরার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনের কাছে ওই তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চান। কিন্তু পুলিশ কমিশনার কোনও স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী তদন্তে আরও গতি আনতে তাঁকে নির্দেশ দেন। এরপরে বিকেলেই পুলিশের তদন্তকারী দল এসজেডিএ দফতরে হানা দিয়ে প্রচুর নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। অভিযুক্ত দুই ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে সপ্তর্ষি পাল নামে এক জনকে জেরাও করা হয়েছে। |
মুখ্যমন্ত্রী এই উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মাকেও ওই মামলাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখে নয়ছয় হওয়া টাকা কী ভাবে উদ্ধার করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারি টাকা নয়ছয় আমি বরদাস্ত করব না। যে বা যাঁরা জড়িত সকলকে শাস্তি দিতে হবে। তদন্তে ঢিলেমি চলবে না। তদন্ত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করতে হবে। যাতে সরকারি টাকা ফেরত পাওয়া যায়, সে জন্য সব রকম আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ অফিসারদের সে কথা বলে দিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে এসজেডিএ-এর তরফে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় ওই দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের হয়। তবে এসজেডিএ-এর অফিসারদের একাংশের দাবি, অভিযোগপত্র জমা নিতে পুলিশ টালবাহানা করে। ওই দিন বেলা ১২টা নাগাদ এসজেডিএ-এর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারের লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিতে নিয়ে যান সরকারি আইনজীবী সহ দু’জন। তার প্রায় ২ ঘন্টা বাদে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব হস্তক্ষেপ করার পরে পুলিশ এফআইআর জমা নেয়। এসজেডিএ-এর তরফে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতরে জানানো হয়। আইজি অনুজ শর্মাও কেন এফআইআর নিতে টালবাহানা হয়েছে তা নিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
ঘটনাচক্রে, এদিন কলকাতা ফেরার আগে গৌতমবাবুর কাছে ওই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে খোঁজ নেন মমতা। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, তখনই পুলিশের তরফে ঢিলেমির বিষয়টি সামনে চলে আসে। এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য গেলেও তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বৈঠক করেননি। তাঁর আমলেই এই দুর্নীতি হয়েছে। রুদ্রনাথবাবু অবশ্য এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আইন অনুযায়ীই যা হওয়ার হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সপ্তর্ষি পাল ও একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। অভিযোগ, বাগডোগরা, মালবাজার ও ময়নাগুড়ি শ্মশানে তিনটি বৈদ্যুতিন চুল্লি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় এসজেডিএ। প্রতিটি চুল্লির জন্য বরাদ্দ হয় ৯ কোটি ৭৪ হাজার ৩৮ হাজার টাকা। অভিযোগ, ওই চুল্লি তৈরি না করেই তার যন্ত্র কেনা হয়েছে বলে দেখিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের নৌকাঘাট ও ফুলবাড়িতে কাজ দেখিয়ে ১৭ কোটি ৬ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এসজেডি’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক বলেন, “সমস্ত অভিযোগ পুলিশে জানিয়েছি। পুলিশ নথিপত্র খতিয়ে দেখেছে।”
|