পদ থেকে অপসারিত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় মুখ খুললেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরের সময়ে এসজেডিএ তে নানা কাতে বহু কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পান। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের শেষ দিন ১৪ মার্চ তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে। সেই থেকে রুদ্রনাথবাবু কোথাও কোনও মন্তব্য করেননি। অবশেষে নীরবতা ভেঙে রবিবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্টস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রুদ্রনাথবাবু বলেন, “আমি পারিবারিক কারণে পদ থেকে সরতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। কী পারিবারিক কারণ তা বলা সম্ভব নয়।” পরিবার সূত্রের খবর, রুদ্রনাথবাবুর মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। তিনি সেখানে যেতে পারেননি। ফুরসৎ মিললে রুদ্রনাথবাবু মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন বলে তাঁর এক পারিবারিক বন্ধু জানিয়েছেন।
তবে তাঁর আমলে এসজেডিএ তে যে জোড়াপানি সংস্কারের নামে কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সে কথা ফের কবুল করেন রুদ্রনাথবাবু। তাঁর কথায়, “আমি দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েই চিঠি লিখে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর দফতরের একজন শীর্ষ ইঞ্জিনিয়রকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসজেডিএ-এর এগজিকিউটিভ মৃগাঙ্ক সরকারকে জলপাইগুড়িতে বদলির নির্দেশ দিয়েছি। বর্তমানে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁর উপরে আমার আস্থা রয়েছে। তিনি দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের চিহ্নিত করে কঠোর পদক্ষেপ করবেন।”
এসজেডিএ সূত্রের খবর, ত্রিফলা আলো বসানোয় বিধি ভেঙে তৃণমূলের এক জেলা নেতার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে কয়েক কোটি টাকার একাধিক বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জোড়াপানি নদী সংস্কারের কাজেও কোটেশনের ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাজ একাধিক ঠিকাদার সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই কাজের বরাতপ্রাপ্ত একটি ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে এসজেডিএ-এর এক ইঞ্জিনিয়র ও শীর্ষ অফিসারের যোগসাজশের অভিযোগও রুদ্রনাথবাবুর কাছে পৌঁছায়। ঘটনাচক্রে, বামেদের তরফে এসজেডিএ-এর নানা দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। তবে ওই ইঞ্জিনিয়রের বিরুদ্ধে কখনও কোনও বাম নেতাকে সরব হতে দেখা যায়নি কেন সেই ব্যাপারেও বিস্মিত এসজেডিএ-এর অনেকেই। এসজেডিএ-এর অফিসার-ইঞ্জিনিয়র-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বাম আমল থেকে কয়েকজন ঠিকাদার ও মুষ্টিমেয় অফিসার-ইঞ্জিনিয়রের যোগসাজশে এসজেডিএ চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই কর্মীদের আক্ষেপ, “তৃণমূল আমলেও ওই গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। রুদ্রনাথবাবু তদন্ত শুরু করিয়ে ও একজনকে বদলির নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের আমলেও সেই ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়র-অফিসারদের আঁতাত ভাঙে কি না সেটাই দেখার।’’
এ ব্যাপারে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “জোড়াপানি নদীর মাটি কাটা নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি রুদ্রনাথবাবু আমাকে জানিয়েছিলেন। দফতরের বাস্তুকারকে দিয়ে তদন্তের জন্য বলেছিলেন। তবে এসজেডিএ স্বাধীন ভাবে কাজ করে বলে সে ব্যাপারে তখন কিছু করিনি। এখন দায়িত্ব পেয়েছি। সব খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড়া হবে না।”
এ দিকে, এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমার সময়ে সব কাজের অডিট হয়েছে। গত দুবছরে কত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেটা রুদ্রনাথবাবু ভাল করে জানেন। ওঁর মদতেই সব হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন যিনি এসজেডিএ-এর দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি দোষীদের আড়াল করেন কি না সেটাই দেখার বিষয়।” |