পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখে ফের একযোগে বোর্ড চালানোর ইঙ্গিত দিল কংগ্রেস-তৃণমূল। অন্তত আগামী আর্থিক বছরের (২০১৩-১৪) বাজেট পাস করানোর ব্যাপারে উভয় তরফের উদ্যোগ দেখে তা-ই ভাবছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। শনিবার পুর বাজেট পেশ হয়েছে। আজ, সোমবার বাজেট নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা। সেখানে বামেরা যোগ দেবে না বলে জানিয়েছে। তৃণমূল কী করবে তা নিয়ে রবিবার শিলিগুড়ির পূর্ত দফতেরর বাংলোয় আলোচনায় বসেন দলের কাউন্সিলররা। বৈঠকের পরে তৃণমূলের পুরসভার পরিষদীয় দল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “নির্বাচনী ইস্তেহারে এমন কিছু করার কথা বলা হয়েছিল, যার উল্লেখ বর্তমান বাজেটে নেই। তাই বাজেট বিতর্কে যোগ নিয়ে সংযোজন, সংশোধনের মাধ্যমে তা অন্তর্ভুক্ত করতে বলব।”
পাশাপাশি, চেয়ারম্যান পদে নান্টু পালকে মেনে নেওয়া নিয়ে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের আচরণ বিভ্রান্তিকর বলে গৌতমবাবু মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, “একবার উনি (মেয়র) নান্টু পালকে চেয়ারম্যান মানেন না বলে মামলা করছেন। আবার তাঁকে চেয়ারম্যান মেনে বাজেট পেশ করছেন। ওঁর এই দিশাহীন ও বিভ্রান্তিকর আচরণের জবাব দেবে শিলিগুড়ির জনতা।”
তৃণমূলের বাজেট বিতর্কে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “তৃণমূলের কাউন্সিলরদের তরফে ভাল কোনও সংশোধনী এলে তা নিশ্চয়ই গ্রহণ করা হবে। শিলিগুড়ি পুর এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই সব কাউন্সিলরদের পদক্ষেপ করতে হবে। তাই বিতর্কে সকলকে যোগ দিতে অনুরোধ করেছিলাম।”
সম্প্রতি নান্টু পাল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে দুই জোট শরিকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। নান্টুবাবু তৃণমূলের হয়ে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে জেতেন। ভোটাভুটিতে কংগ্রেস অংশ নেয়নি। বামেরাও বয়কট করে। ওই ঘটনার জেরে মেয়র বিজ্ঞপ্তি জারি করে তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র-সহ সব মেয়র পারিষদকে সরিয়ে দেন। আপাতত মেয়র একাই বোর্ড চালাচ্ছেন। এর পরেই কংগ্রেস-তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে। এমনকী, জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার ২৫ মার্চের মধ্যে নান্টুবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো না-হলে তৃণমূলের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের সহযোগিতায় বাজেট পাস হওয়ার পরে ২৬ মার্চ থেকে এককভাবে সব মেয়র পারিষদ নিয়োগ করতে পারে কংগ্রেস। আবার ভোটে যাওয়ার কথা জানিয়ে বোর্ড ভেঙে দিতে রাজ্যের কাছে সুপারিশও করতে পারেন মেয়র।
যদিও তৃণমূল ও কংগ্রেসের অন্দরের খবর, যে হেতু পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোতে মাত্র দেড় বছর বাকি। সে জন্য বিবাদ না-বাড়িয়ে কোনভাবে ওই দেড় বছরে ‘আরও কিছু কাজ’ করাতে চাইছেন কংগ্রেস-তৃণমূলের প্রায় সব কাউন্সিলরই। সে জন্যই পরস্পরকে নানা চ্যালেঞ্জ ছোড়ার পরেও উভয়পক্ষ মিলে বোর্ড টিঁকিয়ে রাখার জন্য রফা সূত্রও খুঁজছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম আগের দিনের কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “আমরা তো আগেই বলেছি কখনও কুস্তি আবার কখনও দোস্তি, এই নীতিতেই বোর্ড চালাচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূল। এখন আদালতে কুস্তি চলছে, বোর্ডে দোস্তি। উন্নয়ন, পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দারা সব দেখছেন, বুঝতেও পারছেন।” |